অবশেষে একসাথে-পর্ব:০১

কাজী ফরহাদ
কাজী ফরহাদ কাজী ফরহাদ
প্রকাশিত: ১০:২৫ অপরাহ্ন, ০৪ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

আমেরিকা থেকে গতকাল রাতে রাতুল এসেছে দেশে। আজ বিকেলে ঘুরতে বের হয়েছে। একটানা পাঁচ-বছর পর সে দেশে ফিরছে। সবকিছু কেমন যেন বদলে গেছে। রাতুল গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। চারপাশ দেখছে, কিন্তু পাঁচ-বছর আগের সেই মনোরম পরিবেশ এখন নেই। কেমন যেন নোংরা লাগছে। আমেরিকা থাকার কারনে নিজের দেশের পরিবেশ টা ভালো লাগছে না। গাড়ি ড্রাইভ করে রাতুল তার পছন্দের এক জায়গায় গেল। বলতে গেলে ছোটবেলা থেকেই বেশ পছন্দের এই জায়গাটা।

চারদিকে গাছ-গাছালিতে ঘেরা। বসার জন্য আলাদা সিঁড়ি রয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে সেখানকার সিঁড়িতে গিয়ে বসল। সেখানে একটা কদম গাছ রয়েছে। রাতুল লক্ষ্য করে দেখল, এখনো সেই কদম গাছ আছে। কদম কাছ থেকে আরেকটু দূরে গেলেই পাওয়া যায় একটি নদী। কদম গাছের কাছে গিয়ে, কদম তলায় কিছুক্ষন বসল। তারপর নদীর কাছে চলে গেল। নদীর পাড়ে বসে বসে, নদী দিয়ে যাওয়া পানি দেখছে। আর মনে মনে ভাবছে, নদীর স্রোতের মতো আমাদের জীবন, নদীর পানি গেলে যেমন ফিরে আসেনা। ঠিক তেমনি করে আমাদের জীবন থেকে একটি দিন চলে গেলে সেই দিন আর ফিরে আসে না।

হঠাৎ চেনা চেনা কণ্ঠে কে যেন বলে উঠল,
” কেমন আছেন’?
রাতুল চমকে যায়! ঘাড় ফিরে পেছনে তাকায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে, নীলা দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়েছে খানিকটা। জিজ্ঞেস করে,
” তুমি এখানে’?
নীলা আবার বলল,
” সে প্রশ্ন তো আমারও! তুমি এখানে কী করছ’?
” আসলে অনেক দিন পর দেশে এসেছি! তাই ভাবলাম জায়গাটা একবার দেখে যাই।
” ওহ আচ্ছা! আমি প্রতিদিন এখানে আসি।
” ওহ আচ্ছা! কিন্তু কেন’?
নদীর ওপারে তাকিয়ে নীলা জবাব দেয়,
” এই যায়গা জুড়ে আমার কতো স্মৃতি।
কথা বলা থামিয়ে রাতুল বলল,
” আচ্ছা বাদ দাও! এখন বলো, কেমন আছ’?
” কেমন আছি, সে ‘ তো নিজের চোখেই দেখতে পারছেন। ভালো না থাকলে কী এখানে আসতাম।
” আচ্ছা আন্টি,আংকেল, জেরিন! সবাই কেমন আছে?
” আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন? তুমি নিজে বাসায় গিয়ে দেখে আসতে পারনা।
” আচ্ছা ঠিক আছে! আন্টিকে বলে রেখ আমি একদিন আসব বাসায়।

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, আপনারা হয়তো ভাবছেন, রাতুল এবং নীলার মাঝে কী সম্পর্ক। কীভাবে দু’জন দু’জনাকে চিনে। তাহলে শুনেন, রাতুল এবং নীলা দু’জন দু’জনাকে একসময় ভালো-বাসতো। তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। মুলত তাদের প্রেম কাহিনী নিয়ে আমার এই গল্প লেখা!

পাঁচ বছর আগের কাহিনী,।
নীলা ক্লাস টেনে পড়াশোনা করে। রাতুল ইইন্টারমিডিয়েট শেষ করে, চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্চে ভর্তি হয়েছে। একদিন বাসে করে, রাতুল যেন কোথায় যাচ্ছিল। সামনের স্টেশনে এসে বাস দাঁড় করালো। সেখান থেকে একটি মেয়ে উঠল বাসে। উঠে ওদিক-সেদিক তাকায় কিন্তু কোথাও সিট নেই। মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। বাসের হেল্পারকে জিজ্ঞেস করল,
” দাদা বাসে যে সিট নেই! আমি বসব কোথায়?
বাসের হেল্পার বলল,
” দিদি, সিট নেই! যদি দাঁড়িয়ে যেতে পারেন, তাহলে বাসে থাকুন।
” আচ্ছা ঠিক আছে! সমস্যা নেই।
রাতুল লক্ষ্য করে দেখল মেয়েটে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের সিট থেকে উঠে মেয়েটির কাছে গিয়ে বলল,
” আপনি গিয়ে আমার সিটে বসতে পারেন। আপনার দাঁড়িয়ে যেতে কষ্ট হবে।
মেয়েটি বলল,
” না ভাইয়া আমি ঠিক আছি। বলার জন্যে ধন্যবাদ।
রাতুল বলল,
” কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসেন গিয়ে।
মেয়েটিরও দাঁড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস নেই। সেজন্য আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ সিটে গিয়ে বসলো। রাতুল দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য কষ্ট হচ্ছে না। রাতুলের দাঁড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে। স্কুল, কলেজ লাইফে কতো দাঁড়িয়ে গেছে তার হিসেব নেই। স্টেশনে গিয়ে রাতুল বাস থেকে নেমে কোথায় উধাও হয়ে যায়, আর খুঁজে পায়নি মেয়েটি।

বড্ড মন খারাপ হয়েছে। মেয়েটি ভাবলো, ছেলেটা আমার জন্যে কতো কষ্ট করল আমাকে হেল্প করল, অথচ আমি একটা থ্যাংকস দিলাম না। তারপর থেকে দু’দিন অনেক খুঁজেছে! কিন্তু কোথাও পায়নি। তিনদিন পর বান্ধবী, রিপা, লায়লা এবং রুহিকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে যায় মেয়েটি। মেয়েটির নাম ছিলো নীলা।

রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর অর্ডার করার জন্যে ওয়েটারক ডাক দেয়, খাবার অর্ডার করে,তারপর পর খাবার নিয়ে আসা হয়। নীলা তাকিয়ে দেখে রাতুল, বেশ খানিকটা চমকে বলল,
” আরে ভাইয়া আপনি! এখানে জব করেন। আর আমি সারা সারা শহর খুঁজে বেড়াচ্ছি।
” ওহ তাই নাকি? তো খুঁজেন কেন!
” আসলে সেদিন আপনি আমাকে নিজের সিট দিয়ে কতোবড় উপকার করেছেন। অথচ একটা থ্যাংকস দিতে পারিনি।
” ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। থ্যাংকস লাগবে না। সেদিন আমি মানবতার খাতিরে করেছি। আপনি না হয়ে অন্যকেউ যদি হতো তবুও আমি এই কাজ করতাম।

দু’জনের কথা বলে দেখে, নীলার বান্ধবীরা জানতে চাইলো ঘটনা কী! নীলা বান্ধবীদের বলল, কোনো প্রশ্ন না করে শুধু দেখে যাওয়ার জন্যে।

রেস্টুরেন্টের টেবিলের উপর রাখা টিস্যুর বক্স থেকে একটা টিস্যু বের করে, তার উপর নাম আর নাম্বার লিখে টেবিলের উপরে রেখে যায় নীলা। রাতুল টিস্যু হাতে নিয়ে দেখল তারপর ফেলে দিলো। পরের দিন আবার আসল নীলা রেস্টুরেন্টে। এসে দেখে রাতুল নেই রেস্টুরেন্টে। ম্যানেজারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” স্যার গতকাল যে আমাদের খাবারগুলো একজন ওয়েটার দিয়েছিলেন উনি কী আসেন নি আজ?
ম্যানেজার বললেন,
” কোন ওয়েটার! নাম কী?
” নাম জানিনা! তবে উনার উচ্চতা পাঁচ ফিট্ সাত ইঞ্চি হবে। গায়ের রং শ্যামলা।
” ওহ আচ্ছা আপনি কী রাতুল স্যারের কথা কথা বলছেন, উনি তো ওয়েটার না! এই রেস্টুরেন্টের মালিক।
” ওহ মাই গড! আমি আরো কতকিছু ভেবে বসেছি।
” সমস্যা নেই ম্যাম! ভুল তো মানুষেরই হয়। আর রাতুল স্যার আজ আসেননি।
” আচ্ছা উনাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে?
” হুম! বাসায় গেলেই পাবেন।
” আচ্ছা উনার বাসার এড্রেস কী দেওয়া যাবে?
” হুম অবশ্যই।

ম্যানেজারের কাছ থেকে বাসার ঠিকানা নিয়ে নীলা যায় রাতুলের বাসায়। রাতুলের বাসার দরজায় ঠকঠক শব্দের আওয়াজ শুনে, রাতুলের বাবা রহমত আলী দরজা খুলে দেখেন, যুবতী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলেন,
” কে আপনি কাকে চান?
নীলা বলল,
” আসসালামু আলাইকুম আংকেল। আমি নীলা! রাতুলের কাছে এসেছি।
” ওহ আচ্ছা ভেতরে এসো। রাতুল কী হয় তোমার?
” রাতুল আর আমি বন্ধু।
রান্নাঘর থেকে রেজিয়া খাতুনের গলার আওয়াজ!
” কে এসেছে গো! রাতুলের বাবা।
রহমত আলী বললেন,
এসে দেখ কে এসেছে।
রেজিয়া খাতুন রান্নাঘর থেকে এসে দেখেন, যুবতী এক মেয়ে। রাতুলের মা’কে দেখে নীলা সালাম করে। সালামের উত্তর দিয়ে রেজিয়া খাতুন বললেন,
” কে মা তুমি?
“আন্টি আমি নীলা! রাতুলের বন্ধু।
রেজিয়ে খাতুন হেসে ফেললেন। তারপর বলেন,
” বন্ধু নাকি অন্যকিছু?
নীলা লজ্জা পেয়ে বলে,
” হ্যাঁ আমরা দু’জন দু’জনাকে ভালোবাসি। দু’দিন ধরে রাতুলের সঙ্গে কথা হয় না। আসলে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল। সেজন্য অভিমান করেছে।

চলবে…….