ঢাবি ছাত্রলীগ : রাজনীতি ছাড়ছেন কর্মীরা, হতাশায় হলের পদপ্রত্যাশীরা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ন, ২১ জুন ২০২১ | আপডেট: ১০:১৪ অপরাহ্ন, ২১ জুন ২০২১

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা। এই শাখা থেকেই মূলত উঠে আসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর ঢাবি শাখার মূল শক্তি হিসেবে বিবেচিত আবাসিক হলের নেতাকর্মীরা। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতাই উঠে আসেন এখান থেকে। তবে ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের তিন বছর হয়ে গেলেও ঢাবির হল কমিটি ঘোষিত হয়নি।

এতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার পথ অনেকটাই থেমে গেছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসা নেতাকর্মীরা রাজনীতি ছেড়ে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেছেন। সাংগঠনিক গতিশীলতা না থাকায় মেধাবী কর্মী হারাচ্ছে ছাত্রলীগ। আর দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় রাজনৈতিক ক্যারিয়ারসহ অনিশ্চয়তায় পড়েছে হল শাখার পদপ্রত্যাশীদের ভবিষ্যৎ। আগের কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে কমিটি থাকাকালে ঢাবিতে ছাত্রলীগের হল, অনুষদ, বিভাগ ও ইনিস্টিটিউট শাখা মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার পদধারী নেতা ছিলেন। সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি মিলিয়ে সে সংখ্যা কমে চারশতে দাঁড়ায়। বর্তমান কমিটির শুরুর দিকে হলগুলোতে পদপ্রত্যাশী তিন শতাধিক নেতাকর্মী থাকলেও বর্তমানে তা একশতে এসে ঠেকেছে।

 রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকায় দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে যোগদান করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা। অনেকে আবার বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন। নেতাদের দুরবস্থা দেখে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মীরাও ছাত্র রাজনীতিতে উৎসাহ হারিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যক্তিগত জীবন গোছানোর কাজে। ঢাবি ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে দেখা করেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদ উর্ত্তীন কিমিটির সভাপতি সনজিত দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

দেখা করে আসার পর হল শাখার পদপ্রত্যাশী অনুসারীদের নিয়ে পৃথক জায়গায় বসেন তারা। সেখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের অনুসারীদের বলেন, হল কমিটি নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। হল কমিটি হতেও পারে, নাও পারে। এটা নিয়ে ধৈর্য হারানো যাবে না। যাদের দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পরিকল্পনা আছে তারা রাজনীতি করবেন, না থাকলে পড়াশোনা শুরু করতে পারেন। আর হল কমিটি নিয়ে কোনো কথা থাকলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বলতে পারেন। এ সময় উপস্থিত হল শাখার পদপ্রত্যাশীরা কোনো প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য না করে চলে আসেন।

পরে তাদের কয়েকজন সাংবাদিকদের কাছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও পণ্ডশ্রমের কথা ব্যক্ত করেন। পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, পদ দেয়ার আশ্বাসে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় শাখার নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রটোকল দিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না বা খরচ বহন করছেন না। অন্যদিকে কমিটি দেয়া হবে বলে বিভিন্ন সময় মুখরোচক আশ্বাস দিয়ে আসছেন। আর কমিটি হলেও যে প্রত্যাশীরা পদ পাবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই।

এখন তারা না পারছেন রাজনীতি করতে, না পারছেন ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় থেকে নিজের খরচ চালাতে, আবার না পারছেন কর্মীদের খোঁজ নিতে। ফলে কর্মীরা তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। ঢাবি ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, করোনা রোধে লকডাউনের সময়ও পদপ্রত্যাশী নেতাদের কোনো খোঁজ নেয়নি কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব। বিভিন্ন জায়গায় থাকা ছাত্রলীগের কর্মীদেরও খোঁজ নিতে পারেননি পদপ্রত্যাশীরা। ফলে ক্রমেই রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন কর্মীরা।

এ কারণে ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে ঢাবি শাখার কর্মীদের উল্লেখযোগ্য যোগদান চোখে পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগ পর্যন্ত যেখানে ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচি ঢাবি শাখার নেতাকর্মীরা বাস্তবায়ন করতেন, এখন সে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ভাড়া করে অন্য শাখা-ইউনিটের কর্মীদের আনতে হচ্ছে।