উলিপুরের সেই অসহায় হাসিনার স্বামী আলতাফ এখন মৃত্যু পথযাত্রী

এ আর রাকিবুল হাসান কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
এ আর রাকিবুল হাসান কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি এ আর রাকিবুল হাসান কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:৪৬ অপরাহ্ন, ০২ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ১১:৪৬ অপরাহ্ন, ০২ জুলাই ২০২১

কুড়িগ্রামের সন্ত্রাসী চক্রের মূল হোতা ধরাছোঁয়ার বাইরে। জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই রঘুরায় ঝাকুয়াপাড়া গ্রামে দুই ডজনের অধিক মামলায় অভিযুক্ত মাহাবুবার  এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার বাহিনীরা একই গ্রামের প্রতিবেশী সাবেক সেনাসদস্য  আলতাফ হোসেনের স্ত্রী  হাসিনা বেগমের  দুইটি গরু দিন-দুপুরে চুরি করে। যার প্রেক্ষিতে হাসিনা  বাদী হয়ে উলিপুর থানায় মামলা করেন,মামলা নং-১৯০/২০।   

পরবর্তীতে উক্ত মামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে  মাহাবুবার গংরা  হাসিনার স্বামী আলতাফকে  অপহরণ করে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে বেধড়ক মারডাং যখম করে পুলিশের মোড় নামক স্থানের পাশেই গর্তে ফেলে যায়, যার মামলা নং-২৩/২১ (উলিঃ)। স্বাক্ষীরা উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন, ভর্তি রেজিঃ নং-৪০৬৪, ওয়ার্ড ৩/৪, তারিখ- ২২/০৭/২০২০। সেই আঘাতের ফলে কয়েক দফায় অর্থাৎ বেশিরভাগ সময়েই আলতাফ  হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং বর্তমানেও হাসপাতালে ভর্তি আছেন, সর্বশেষ কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের ভর্তি নং- ৪৫৫৩/২৭, তারিখ-১৩/০৬/২০২১। তিনি এখন মৃত্যু পথ যাত্রী। 

আলতাফের স্ত্রী হাসিনা  জানান, কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের ডাক্তার জানিয়েছেন অনেকবেশি মারডাং এর ফলে তার শরীরের ভিতরের বিভিন্ন স্থানে ইনফেকশন হয়েছে। রুগীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, বাঁচা-মরা এখন আল্লাহর হাতে।                           

তিনি আরো বলেন, আমাকে গ্রামের অন্য কেউ যেকোনো সাহায্য সহোযোগিতা করলেই বা করতে আসলেই সন্ত্রাসী চক্রটি তাদের ভয়ভীতি দেখান এমনকি কয়েকজনকে মারধর ও করেছেন। হাসিনা   আরও বলেন, আমার অসুস্থ স্বামী এবং আমার ৭/৮ বছরের একটা মেয়ে সন্তান বিছানা থেকে একেবারেই উঠতে পারেন না।  আমার অসহায়ত্ব দেখে একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আঃ আজিজ  তিনি সম্পর্কে আমার তাওয়াই হয়, তিনি একজন ভালো মানুষ, আমার চোখেরপানি সহ্যকরতে না পেরে তিনি আত্মিয়তার সম্পর্ক থেকে মাঝে মধ্যে আমাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহোযোগিতা করার কারণেই তাকে মিথ্যা অপবাদে ফাঁসিয়ে নগদ ৪ লক্ষ টাকা চাঁদা   মাহাবুবার  ও রফিকুলগংরা লুটে নিয়েছেন। তাওয়াই দিশেহারা হয়ে বিপদের কথা চিন্তা করে আল্টিমেটামের ২৪ ঘন্টার মধ্যে দাবীকৃত চাঁদার ৪ লক্ষ টাকা সুদের উপর এনে নরপিশাচদের হাতে বুঝেদিলে তারপরেই  মুক্তিযোদ্ধা সেই বিপদ থেকে রেহাই পান। 

তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীরা এখনো বিভিন্ন ভাবে আমাকে বা আমার অবুঝ শিশুকে মেরে ফেলার অথবা গুম করার হুমকিধামকি দিচ্ছেন এবং  আরো বলে বেড়াচ্ছেন আমার স্বামী মারা যাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে বাড়িঘর সহ ভিটেমাটি টুকুও দখল করে নিবেন। হাসিনা আরো বলেন, ভিটেমাটি টুকু ছাড়া জমাজমি টাকাপয়সা সবশেষ করে পথে বসেছি। স্বামীর চিকিৎসার খরচের যোগানোয় একটি অবুঝ শিশুর অসহায় পরিবারটির খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে। অপরদিকে স্বামীকে বাচাঁতে হাসপাতালের রুমে রুমে ছুটছি। আল্লাহর রহমত ও সবার দোয়া কামনা করছি। সবকিছু হারিয়েও যদি স্বামীর জীবনের ক্ষতি হয়,  সন্ত্রাসী মাহাবুবার সহ তার সহোযোগিরা যাতে এই দায় এড়াতে না পারে এর জন্য আমি  সংশ্লিষ্ট উলিপুর থানার সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

এলাকাবাসী জানান, প্রায় সময়েই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে থাকেন মাহাবুবার গংদের বিভিন্ন অপকর্মের খবর। বর্তমান সময়ে সীমান্ত চোরাচালান মামলার অন্যতম পলাতক আসামি এই মাহাবুবার , যার পোর্ট থানা বেনাপোল, যশোর এর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা নং-৫২/১৪৮, তারিখ ২৫/০৩/২০২১। বিভিন্ন সময় তার প্রায় সকল কু-কর্মের প্রধান বা অন্যতম সহোদর/সহোযোগি  হারুন অর রশিদ উলিপুর থানার পাঁচপীর দুর্গাপুর বাজারের দেশব্যাপী সেই আলোচিত মামলা তৎকালীন “কুড়িগ্রাম ডিসির “মাথায় রক্ত জখম মামলার” ২নং সাজাপ্রাপ্ত আসামি, বর্তমানে হাইকোর্টের জামিনে থেকে মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্তথেকে দলনেতা মাহাবুবারের প্রিয়ভাজন হয়ে আছেন। তার আপন দুই ছোটা ভাই এর মধ্যে মজিবুর রহমান, নৌবাহিনীর ইএ অর্থাৎ ইলেকট্রিক পদের চাকুরী করেন।

প্রায় সময় ছুটিতে থেকে নৌবাহিনীর ক্ষমতা খাটিয়ে ঝাকুয়াপাড়া গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। সদ্য এক সাবেক ইউনিয়ন ও বর্তমান উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মীকে লাঞ্ছিত ও মারপিটের ঘটনা ঘটিয়েছেন, যার মামলা নং-০৯/২০২১(উলিঃ),। মজিবুরের উল্লেখযোগ্য মামলাগুলোর মধ্যে মামলা নং- ০৮/১৪ (উলিঃ)  মুক্তিযোদ্ধার একাধিক বাড়ীঘর ভাংচুর লুটপাট এর ০১ নং আসামী হিসেবে সারা দেশব্যাপী সমালোচিত ব্যক্তি। আরেক ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিঠু একাধিক মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সদ্য একটি মাদক মামলায় আটক হয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানায়।

এছাড়াও এলাকাবাসীর সূত্রে আরো জানা যায়, বাদী দের আইনি সহয়তা বা বিচারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে গেলে বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি সহ বাদীপক্ষদের প্রকাশ্যে মৃত্যু হুমকিধামকি দিয়েই যাচ্ছেন মাহাবুবার রহমান ও তার দলের ব্যাক্তি'রা। এই সন্ত্রাসী চক্রটির নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতারণার, চুরি, চাঁদাবাজি, কৌশলে উক্ত গ্রামের  সাজুল মিয়া, পিতা আঃ হাই, তাকে জুয়ার বোর্ডে জমির বিনিময়ে টাকা ধারদিয়ে সেই টাকাসহ জমি জিতে/লুটে নেওয়া, ধর্ষণ, সীমান্ত চোরাচালান, লুটতরাজ, মারপিট/রক্তজখম, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট, মাদক ব্যবসা, উলিপুরের বরেন্য শিক্ষক মরহুম আছাব্বর আলী ওরফে খোকা মাস্টারের, কবর দখল করে সেই কবরের উপর বসতঘর নির্মাণ, বসতভিটাসহ জমি-জায়গা দখল, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশদ্রোহী কর্মকান্ড, ঢাকা সাইবার আদালতের আইসিটি মামলা এবং জামাত-বিএনপির পক্ষে সরকার বিরোধী অনলাইন কার্যক্রম চালানোর তথ্য পাওয়া গেছে।

এলাকার জনগন এসব অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত করে মাহাবুবার সহ সকল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন। গ্রামের আশপাশের শান্তিপ্রিয় মানুষ উক্ত ঝাকুয়াপাড়া গ্রামে যাতে শান্তি ফিরে আসে সে-ধরনের প্রতিশ্রুতি চাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে।