রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার আলোচিত মেয়র মুক্তার আলী ঈশ্বরদী থেকে গ্রেপ্তার

মোহাম্মদ আলী,রাজশাহী ব্যুরো
মোহাম্মদ আলী,রাজশাহী ব্যুরো মোহাম্মদ আলী,রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: ১০:২৭ অপরাহ্ন, ০৯ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার আলোচিত মেয়র মুক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোররাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভাইরাভাইয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন মুক্তার আলী। বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তারের পর পর আড়ানী পৌরসভার পিয়াদাপাড়া মহল্লায় মেয়রকে তাঁর বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর উপস্থিতিতে বিভিন্ন আলামত জব্দ করছিল পুলিশ।

ওসি নজরুল ইসলাম জানান, বাড়িতে নতুন করে আরও কিছু ফেনসিডিল, গাঁজা ও টাকা পাওয়া গেছে। টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৩২ হাজার। আজ মেয়র মুক্তারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে বলেও জানান ওসি নজরুল ইসলাম। 

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে পৌর এলাকার এক শিক্ষককে মারধর করেন মেয়র ও তাঁর লোকজন। এ নিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন মনোয়ার হোসেন নামের ওই শিক্ষক। এরপর রাতেই মেয়রের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। 

এ সময় মেয়রকে না পাওয়া গেলেও বাড়িতে মেলে একটি অবৈধ বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গান, দেশে তৈরি একটি বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, চারটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, পিস্তলের ১৭ রাউন্ড গুলি, চারটি গুলির খোসা, ১০ গ্রাম গাঁজা, সাত পুরিয়া হেরোইন, ২০টি ইয়াবা বড়ি, ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং মেয়রের দুটি সই করা চেক। চেক দুটিতে টাকার পরিমাণ আরও ১৮ লাখ।

ওই অভিযানে আটক করা হয় মেয়রের স্ত্রী জেসমিন আক্তার এবং দুই ভাতিজা শান্ত ও সোহানকে। এ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা করা হয়।

পুলিশের করা এ মামলা দুটিতেও মেয়র মুক্তারকে আসামি করা হয়। বুধবার মেয়রের স্ত্রী এবং ভাতিজাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তবে লাপাত্তা ছিলেন মেয়র মুক্তার আলী। অবশেষে তিনিও গ্রেপ্তার হলেন।

মুক্তার আলী প্রথমে ছিলেন আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তারপর হন আড়ানী পৌরসভার কাউন্সিলর। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি প্রথমবার মেয়র হন। চলতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হন।

মুক্তার আলী তখন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপরও মুক্তার ওই নির্বাচনে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন দলীয় প্রার্থীকেই। মুক্তারের সমর্থকেরা হামলা করেছেন দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর।

ঘটে গোলাগুলিরও ঘটনা। তখন এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এই মামলা মাথায় নিয়েই মুক্তার আলী শপথ নেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি।

নতুন করে শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের করা একটি এবং পুলিশের করা দুটি ছাড়াও আগে থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ছিল। আড়ানীর ত্রাস মুক্তার আলী মন চাইলেই যাকে ইচ্ছে মারধর করেন। সব সময় থাকেন মদ্যপ অবস্থায়।

তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় পৌরবাসী এবং দলীয় নেতা–কর্মীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।