পত্নীতলার নার্সারী ব্যবসায়ীকে টর্চার সেলে নির্যাতন, স্ত্রীর চুল কর্তন

মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:৪৩ অপরাহ্ন, ২২ অগাস্ট ২০২১ | আপডেট: ১২:২৫ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

নওগাঁর পত্নীতলার মিঠুন চৌধুরী (২৭) নামে এক নার্সারি ব্যবসায়ীকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে টর্চার সেলে তিন দিন আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে উদ্ধার করতে স্ত্রী শ্যামলী রাণী (২৫) সেখানে গেলে তাকেও নির্যাতন করে তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। এসব বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ মহাদেবপুরের যুবদল নেতা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ তাদেরকে টর্চার সেল থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহেও এ ব্যাপারে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। ওই পরিবার সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখন তটস্থ রয়েছে। প্রাণনাশের ভয়ে তারা মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না।

রোববার বিকেলে নির্যাতিত মিঠুনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মারাত্মক আহত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। প্রাণভয়ে তারা মামলা দায়ের করতে পারছেন না বলে জানান। তবে তারা নির্যাতনের বিচার চান। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। উপজেলা পর্যায়ে টর্চার সেলের অস্তিত্বের বিষয়ে সুধীমহল বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার উপজেলার উত্তর মামুদপুর গ্রামের কৃষ্ণ চৌধুরীর ছেলে মিঠুন চৌধুরী ও তার স্ত্রী শ্যামলী রাণী অভিযোগ করেন, মহাদেবপুর উপজেলার বোয়ালমারী মোড়ের বয়লার ব্যবসায়ী মৃত আবুল কালামের ছেলে যুবদল নেতা রুহুল আমিন তাদের নার্সারি থেকে বিভিন্ন জাতের চারাগাছ কিনতেন।

গত ১৫ আগস্ট সকালে রুহুল তার কাজ করার জন্য মিঠুনকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক একটি কার গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে মহাদেবপুরে রুহুলের বয়লারে নিয়ে আসে। সেখানে তার বয়লারের সামনে অবস্থিত টর্চার সেলে মিঠুনকে আটকে রেখে মোবাইলফোনে তার স্ত্রীকে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। তার স্ত্রী শ্যামলী রাণী তার মায়ের গলার সোনার মালা বন্ধক রেখে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠান। কিন্তু রুহুল ও তার লোকেরা আরও টাকা চায়। টাকা না পেয়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিঠুনের পায়ের রগ কেটে দেয়, প্লায়ার দিয়ে চিমটিয়ে হাতের আঙুল জখম করে, হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।

তাকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয়নি। তৃতীয় দিন ১৭ আগস্ট শ্যামলী পত্নীতলা থেকে মহাদেবপুর থানার সামনে এসে এসআই সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানিয়ে রুহুলের বয়লারে যান। সেখানে রুহুল ও তার দুই স্ত্রী শ্যামলীকে বেদম প্রহার করে তার মাথার চুল কেটে দেয়। পরে এসআই সাইফুল সেখানে উপস্থিত হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় শ্যামলী ও তার স্বামীকে রুহুলের টর্চার সেল থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু তিনি রুহুল বা তার দুই স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নেননি। আহত মিঠুন ও শ্যামলীকে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত রুহুল মিঠুনকে তিন দিন আটকে রাখার কথা স্বীকার করে জানান, টাকা নিয়েও গাছ না দেওয়ায় টাকা তোলার জন্য তাকে আটক রাখা হয়। এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, নির্যাতিতরা অভিযোগ না দেওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, রুহুলের টর্চার সেল ছাড়াও তার বয়লারে প্রায়ই মাদকের আসর বসে।

মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।