রংপুরে রাষ্ট্রীয় সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বীরমুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আলী আশরাফ এর দাফনকার্য সম্পন্ন।

আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ন, ১৩ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ৫:৫৯ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

রংপুরে রাষ্ট্রীয় সম্মান, শ্রদ্ধা ও হাজারো শুধীজনের ভালোবাসায় রংপুর নগরীর নুরপুর কবরস্থানে শায়িত করা হয়েছে বীরমুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আলী আশরাফকে। রংপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ (৬৬) আর নেই।

সোমবার (১২ জুলাই) রাত ৮ টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে স্ত্রী ও দুই মেয়ে, জামাতাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন বিশিষ্ট এই সাংবাদিক।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বাদ যোহর রংপুর নগরীর পূর্ব কামাল কাছনা জামে মসজিদে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার (রাষ্ট্রীয় সম্মান) নিবেদন করা হয়েছে। পরে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। বেলা তিনটায় নগরীর নূরপুর কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।


পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১১ জুলাই) তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে সাংবাদিক আলী আশরাফ ২০১৭ সালের ৮ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি প্যারালাইসড, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ছাড়াও বিভিন্ন রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন।

অসুস্থ্য হবার পূর্বে আলী আশরাফ বাংলাদেশ টেলিভিশনের রংপুর জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক বায়ান্নোর আলোর নির্বাহী সম্পাদক এবং বাংলাদেশ বেতার রংপুরের নগর সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক যুগের আলো ও দৈনিক দাবানল এর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলার বাণী, সংবাদ ও আমাদের সময় পত্রিকায় রংপুর থেকে কাজ করেন।

আলী আশরাফ রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। টগবগে তরুণ বয়সে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে করেছিলেন। তার ৪৫ বছরের সাংবাদিক জীবনে অনেক সম্মাননা ও অর্জন রয়েছে। আলী আশরাফ একজন সফল বাবা। তার বড় মেয়ে আমিনা লাবিব অমি উচ্চ শিক্ষত। বড় জামাতা শামীম জামান। তিনি বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা ও পরিচালক। তার ছোট মেয়ে আদিবা লাবিব বনির স্বামী কাজী শুভ। তিনিও একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী। আলী আশরাফের শব্দ এবং পুর্ণতা নামে দুই নাতি-নাতনি রয়েছে।

তাঁর স্ত্রী জেনিফার আলী এলি। তিনি সেই নারী, যিনি ১৯৭২ সালে ১১ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রংপুর সফরে আসলে সার্কিট হাউজে তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বারান্দার ক্ষোপ বেয়ে বেয়ে উঠে বঙ্গবন্ধুর হাতে ফুল দিয়েছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী জেনিফার এলির মাথায় হাত রেখে হাসি মুখে কথা বলেছিলেন।

শোক প্রকাশ :

সাংবাদিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের মৃত্যুতে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এছাড়া শোক জানিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধি দলীয় চিফ হুইপ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর সদর-৩ আসনের এমপি রাহ্গীর আল মাহি, রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিশিষ্টজন।