সাত মাসে বদলে গেছে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে সেবার মান

দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ন, ২৬ অগাস্ট ২০২১ | আপডেট: ২:০৫ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। গত কয়েক মাস আগেও তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল উপজেলা জুরে। কিন্তু চলমান ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি ডা. মোছা. শামসুন্নাহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে যোগদান করার পর বৃদ্ধি পাচ্ছে সেবার মান। ফলে উপজেলার সাধারণ মানুষ এখন গ্রাম্য চিকিৎসকদের ব্যতি রেখে চিকিৎসা নিতে ভীর জমাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে বলে জানা গেছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আগে এতো মানুষ চিকিৎসা নিতে আসতো না। হাসপাতালে রোগী ভর্তিও হতে আসতো অনেক কম। যেসব রোগী ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা হতো তারা চলে যেত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু বর্তমানে এখানে চিকিৎসা সেবার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এখানে দৈনিক গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগীকে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এছাড়াও আগের তুলনায় বর্তমানে এখানে বেশ কিছু সেবা বর্ধিত করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে সর্দি ও জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের আলাদা কর্ণার, এসব রোগীদের তাৎÿনিক নমুনা সংগ্রহ করে রেপিড এন্টিজেন পরীÿা করে করোনা আছে কি'না তা নিশ্চিত হওয়া, করোনা ভাইরাস সনাক্ত না হলে ডেঙ্গু জ্বর পরীÿা করা, যক্ষ্ণা রোগ আছে কি'না তা পরীÿা করা, মহিলাদের বিনামূল্যে জরায়ু ও স্ত্মন ক্যান্সার পরীÿা। অপুষ্ট শিশুদের চিকিৎসার জন্য আইএমসিআই সেন্টার থাকলেও এর আগে অন্ত্মঃবিভাগে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কোন সুবিধা ছিল না, বর্তমানে অপুষ্ট শিশুদের ভর্তি রেখে সুচিকিৎসার জন্য দুই বিছানা বিশিষ্ট একটি ইউনিট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রসুতি মায়েদের নরমাল ডেলিভারির জন্য নেওয়া হয়েছে যথপোযুক্ত সু-ব্যবস্থা, প্রসুতি মায়েরে জরম্নরী সিজারের প্রয়োজনে ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে সিজার ব্যবস্থা এবং জরম্নরি উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে তাদের জন্য ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এমনকি কুকুর-বিড়ালসহ জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায় এধরনের পশু কামড়ানো রোগীদের হয়রানি কমাতে এখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে রেবিস্ক ভ্যাকসিন প্রদানের। গত দুই মাসে এ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার চালু করে বিনামূল্যে করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ জনের হাইড্রোসিল রোগীর অপারেশন। বর্হিবিভাবে সেবা নিতে আসা মায়েরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের বাচ্চাদের দুগ্ধ পান করাতে পারে তার জন্য করা হয়েছে বেস্ট ফিডিং কর্নার। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের পরিবারের লোকজনের জন্য রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরীর আর্থিক সহায়তায় করা হয়েছে একটি নামাজ ঘর এবং রোগী ও তার লোকজনের জন্য আলাদা খাবার স্থান। সাধারণ রোগীদের সার্বÿনিক জরম্নরী সেবা প্রদানের লÿে্য চালু করা হয়েছে ০১৭৩০৩১৪৭১৫ নম্বরে "২৪ ঘন্টা মোবাইল সেবা" এবং গর্ভবতীদের জন্য ০১৩০৫১৭৬২৮০ নম্বরে গর্ভবতীদের ২৪ ঘন্টা মোবাইল সেবা। বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে সরেজমিনে গেলে কথা হয় বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রম্নবিনা, সালমা, রফিকুল, সালাম, সুমনসহ বেশ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, আগে এখানে চিকিৎসা নিতে আসলে ডাক্তারেরা রংপুর যাবার কইছিল (বলেছিল)। সেই জৈন্যে (জন্য) এখানে আসতে ভরসা পাইছিন না। কিন্তু এখন মেডিকেলের নয়া (নতুন) অফিসার আসিয়া (এসে) এটেকোনায় (এখানেই) সব চিকিৎসা পাই। আগোত হামরা (আমরা) জানছিন শুক্রবার আর শনিবার মেডিকেল বন্ধ থাকে। কিন্তু বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে হামরা এখন জানি শনিবারেও মেডিকেলত ডাক্তারের ঘর রম্নগী দেখি ঔষধ দেয়। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. শামসুন্নাহার বলেন, আমি যখন এ উপজেলায় দায়িত্বে আসি তখন এই স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের অবস্থা অত্যন্ত্ম অস্বাস্থ্যকর। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে তা স্বাস্থ্যকর তুলেছি। এখানে আগে প্রসূতি মায়েদের ফ্যি ডেলিভারি ব্যবস্থঅ ছিল না, তা করে দিয়েছি। নারীদের গুরম্নত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে জরায়ু মুখে ক্যান্সার ও স্ত্মন ক্যান্সার। যা এখানে পরীÿার কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমি এখানে দায়িত্বে এসে বিনামূল্যে জরায়ু মুখে ও স্ত্মন ক্যান্সার পরীÿার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের আর্থিক সহায়তায় এখানে একটি নামাজ ঘর, রোগী ও রোগীর সাথে আসা লোকজনের আলাদা খাবার ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সর্বপরি এ উপজেলার সাধারণ মানুষ যেন সু-চিকিৎসা পায় তার যথাসাধ্য ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং যতদিন এ উপজেলায় কর্মরত থাকবো ততদিন সে চেষ্টা করে যাবো।