"প্রধানমন্ত্রী যদি একটি ঘর দিতেন, তাহলে সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম"

আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১২:৫৩ অপরাহ্ন, ১৮ জুন ২০২১ | আপডেট: ১:০০ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪




পুরানা ঘরটা ভেঙ্গে গেছে অনেক আগেই। কোন ভাবে জোড়াতালি দিয়ে সন্তান নিয়ে কষ্টে আছে আফিরন বেওয়া। ঝড়-বাতাসে ভয়ে রাতে ও দিন অন্যের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নেয় । একটি সরকারী ঘর অথবা বিধবা ভাতা কার্ড পাওয়ার আশায় দারে দারে ঘুরেছেন অনেকের। সরেজমিনে ১৭ জুন বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক ভাষায় এমনভাবে কথাগুলো বলছিলেন বিধবা আফিরন নামের এক মহিলা। তার বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী  উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আনছার আলীর স্ত্রী।


জানা যায়, বিধবা আফিরন (৩৮) এর স্বামী আনছার আলী প্রায় ৫ বছর আগে মারা গেছেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুইটি সন্তান রয়েছে। তার মৃত্যুকালে রেখে গেছেন মাত্র দুই শতক জমি। এছাড়াও আফিরন বেওয়ার নেই কোনো সহায়-সম্বল। স্বামীর মৃতুর পরে স্বামীর ভিটামাটিতেও স্থান হয়নি তার। বর্তমানে তিনি তার সন্তান নিয়ে পিতার বাড়ী পার-কিশোরগাড়ী তেকানি পাড়ায় অবস্থান করছেন একটি ঝুপড়ীর নিচে। সেখানেই দেখা মেলে বিধবা আফিরন বেওয়ার। সন্তান নিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে ছুটে বেড়াচ্ছেন কখনো কৃষকের মাঠে বা অন্যের দুয়ারে। বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রম বিক্রি, আবার কখনো অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন আফিরন বেওয়া। কিন্তু বিধিবাম! ওইসব কাজের জন্যও কদর কমেছে তার। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে আফিরনকে।


করুণ এই পরিস্থিতিতে ওই বিধবার একমাত্র শোবার ঘরটিও জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। ছিদ্র টিনের চালায় লাগানো হয়েছে পলিথিন ও ট্রিপল। দিনের বেলায় বেড়ার ফুটো দিয়ে দেখা যায় সুর্য্যের আলো। রাতে চালার উপরে দিয়ে নজরকাড়ে আসমানের তারা। জোড়াতালি এ ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন সন্তানসহ আফিরন। এক মুঠো অন্নের যোগানে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাবেন কিন্ত চোখে আসে না ঘুম। ঝড়-বৃষ্টির আতঙ্কে একাকী নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌঁড় দিতে হয় অন্যের বাড়িতে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে ঝুঁকিপুর্ণ এ ঘরে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে আফিরনসহ সন্তানদের শরীরে। এসব রোগ নিরাময়ে নিয়মিত ওষুধ খাবেন! এমন সামর্থও নেই তার। একেবারই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে কোনোমতে বেঁচে রয়েছে ওই ভাঙা ঘরটিতে। সরকারি সুবিধাবঞ্চিত এই বিধবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরেই একাকী বসাবাস করে চলছেন। এখন মৃত্যুর আগে সন্তানদের নিয়ে সরকারি বরাদ্দের একটি পাকাঘরে ঘুমাবেন, এমনটাই আশা করছেন তিনি।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহতী উদ্যোগ, গৃহহীনদের পুর্নবাসন প্রকল্প পলাশবাড়ী উপজেলায় ‘জমি আছে, ঘর নেই’ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় আফিরন পরিবারকে পুর্নবাসন করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীসহ সচেতনমহল। 


এসব তথ্য নিশ্চিত করে অশ্র শিক্ত চোখে বিধবা আফিরন বলেন, সরকারি বরাদ্দে ঘর পাবার জন্যে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও, কাগজপত্র জমা নেয়নি কেউই। তাই প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে একটি ঘর স্থাপন করে দিতেন, তাহলে হয়তো সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।


কিশোরগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু ওই বিধবার জরাজীর্ণ ঘরের সত্যতা স্বীকার করে দৈনিক আলোকিত সকাল ও মতপ্রকাশ পত্রিকার প্রতিনিধি কে জানান, ‘জমি আছে, ঘর নেই’ প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের তথ্য ইতোমধ্যে অনলাইন করা হয়েছে। সেই সময়ে আফিরন বাড়িতে ছিলেন না। এ কারণে তার নামটি অনলাইন করা সম্ভব হয়নি।