তারাগঞ্জে সাড়া জাগিয়েছে রাইস পস্নান্টার

দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ন, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

ফসলের মাঠে সবুজ ক্ষেতে, কৃষকের মুখে ম্স্নান হাসি। কৃষি নির্ভর রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের ফসলের মাঠে যখন সবুজ ধান ক্ষেতে চোখে পড়ে তখন কৃষকেরা হাসি মুখে ব্যস্ত্ম সময় পার করে ধান গাছের পরিচর্যার কাজে। এরপর ধীরে ধীরে ধান বের হওয়ার পর তা সময়ের পরিবর্তনে সোনালী রং ধারণ করে। তখন কৃষকের মুখে দেখঅ যায় ম্স্নান হাসি। কিন্তু বাধসাধে ধান গাছের চারা রোপন ধান গাছ কর্তনের সময়। এসময় এ উপজেলায় দেখা যায় ব্যাপক কৃষি শ্রমিক সংকট। শ্রমিক সংকটের ফলে কৃষকরা সময় মতো ধান গাছের চারা রোপন ও ধান গাছ কর্তন করতে পারে না। কৃষকদের এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের লক্ষে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে নানান কর্মসূচির।

তারই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলায় ২০২১ সালের ২৫ জুন রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত ৭টি কৃষি গ্রম্নপকে দেওয়া হয়েছে ১টি করে রাইস পস্নান্টার (যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান গাছের চারা রোপন যন্ত্র)। উপজেলা কৃষি অফিসারের নিরলস প্রচেষ্টায় ও উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের অক্লান্ত্ম পরিশ্রমের ফলে বর্তমানে উপজেলা জুরে সাড়া জাগিয়েছে রাইস পস্নান্টারের সাহায্যে ধান গাছের চারা রোপন। জানা যায়, বর্তমানে বিভিন্ন ইট ভাটা, কলকারখানাসহ বিভিন্ন কর্মস্থল সৃষ্টি হওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষি খাতে। এ উপজেলার ৯৮ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। ধানের চারা রোপন, ধান গাছ কর্তন ও মারাইয়ের সময় এ উপজেলার কৃষকদের শ্রমিক সংকটের ফলে পড়তে ব্যাপক বিড়ম্বনায়। উপজেলা কৃষি দপ্তরের সহযোগীতায় বিভিন্ন গ্রম্নপ ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ উপজেলায় কয়েকটি ধান মাড়াই যন্ত্র ধান মাড়াইয়ের কাজ করায় কৃষক কিছুটা নিশ্চিত হয়। কিন্তু ধানের চারা রোপন ও কর্তনে কৃষকদের বারবার পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এরপর ধান গাছ কর্তনের জন্য এ উপজেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সরকারি ভর্তুকীর মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় ধান গাছ কর্তনের কয়েকটি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার যন্ত্র। কিছুটা নিরসন কয় ধান গাছ কর্তনে কৃষকদের শ্রমিক সংকটের সমাধান। এরপরও কৃষকরা সমস্যার সম্মুখীন হয় ধানের গাছের চারা রোপন করতে গিয়ে। উপজেলা জুরে কয়েকটি অটো ইটভাটা নির্মিত হওয়ায় সারা বছরই ইটভাটাগুলোতে চলে ইট তৈরির কার্যক্রম। ফলে বর্তমানে সারা বছরই কৃষকদের শ্রমিক সংকটে পড়তে হয়। তারই ফলস্বরূপ ধানের চারা রোপনে শ্রমিক সংকট নিরসনে উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে উপজেলার একটি কৃষক গ্রপে ১টি রাইস পস্নান্টার দেওয়া হয় পরীÿামূলক কার্যক্রম চালানোর লক্ষে তারাগঞ্জ উপজেলার রহিমাপুর বস্নকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে তারাগঞ্জ উপজেলার রহিমাপুর বস্নকে ৭৮ জন কৃষকের সম্মিলিত অংশগ্রহণে সেখানে বাস্ত্মবায়ন করা হয় সমলয় পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে ধান চাষ প্রকল্প। প্রকল্পটিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান গাছের চারা রোপন, নিরানী, ধান গাছ কর্তন ও মাড়াইসহ সকল কাজ করা হয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। এতে সফলতা আসায় কৃষকরা আগ্রহী হয়ে ওঠে রাইস পস্নান্টার যন্ত্র ব্যবহারে। এরপর উপজেলার ৭টি কৃষক গ্রম্নপকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেওয়া হয় ৭টি রাইস পস্নান্টার যন্ত্র। চলমান আমন মৌসুমে উপজেলার ৩টি বস্নকে প্রায় ২০ একর জমিতে মোট ৮টি রাইস পস্নান্টার যন্ত্রের সাহায্যে রোপন করা হয়েছে ধান গাছের চারা। রাইস পস্নান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান গাছের চারা রোপন অধিকতর সহজ, অল্প খরচ ও শ্রমিকের প্রয়োজন না পড়ায় কৃষকরা এখন রাইস পস্নান্টার যন্ত্রের ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করছে বলে জোর দাবী জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। মাত্র এক থেকে দুইজন শ্রমিকের সাহায্যে অতি অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে অধিক পরিমাণ জমিতে রাইস পস্নান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান গাছের চারা রোপন সম্ভব হওয়ায় এখন কৃষকরা এ যন্ত্রের প্রতি ঝুঁকছেন। এরপরও প্রথম দিকে এই যন্ত্রের প্রতি কৃষকরা উদাসীন থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন বস্নকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে এবং সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে এসব যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকরা অধিক লাভবান হওয়ায় এখন এ যন্ত্রে ঝুঁকেছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাস্‌সুম বলেন, রাইস পস্নান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান গাছের চারা রোপনে খরচ অনেক কম এবং স্বল্প সময়ে অধিধক পরিমাণ জমিতে এই যন্ত্রের সাহায্যে ধান গাছের চারা রোপন সম্ভব। একারণে এখন কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি কৃষি ফসল উৎপাদনে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করছে। এখানে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ প্রকল্পে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরনের অংশ হিসেবে রাইস পস্নান্টার যন্ত্রে সাহায্যে কিভাবে ধানের চারা রোপন করতে হয় এবং এ যন্ত্রের ব্যবহারের সুফলগুলো কিকি তা কৃষকদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে আমরা উপস্থাপন করেছি। তাই এখন এ উপজেলার কৃষকরা ধান গাছের চারা রোপনের কাজে রাইস পস্নান্টার যন্ত্রের প্রতি ঝুঁকছেন।