গাইবান্ধায় স্কুল খোলার খবরে জামা-জুতোর দোকানে ভিড়

আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:২২ অপরাহ্ন, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১১:২২ পূর্বাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

ঈদ-পূজা-পার্বণ কিছুই নেই, তার পরেও গাইবান্ধার মার্কেটগুলোর জামা-জুতোর দোকানে গিয়ে দেখা গেল বেশ ভিড়। কারণ হিসেবে জানা গেল, দু'দিন বাদেই খুলছে স্কুল-কলেজ। করোনার কারণে ৭৮ সপ্তাহ ধরে বন্ধ স্কুল-কলেজ খোলার খবরে আনন্দিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। তবে গোল বেঁধেছে স্কুলের ইউনিফর্ম নিয়ে। সেগুলো আর গায়ে আঁটছে না। অনেকের বাক্সবন্দি ইউনিফর্মে পড়েছে হলদেটে দাগ। তাই স্কুল খোলার আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে, সেই তাগিদে জেলার স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম তৈরির নির্ধারিত এই দোকানগুলোতে অভিভাবকদের ভিড়।

গতকাল বৃহস্পতিবার ৯ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের স্টেশন রোডে তরফদার ম্যানসনে তৈরি পোশাকের দোকান রংধনু’র কর্নধার বেলাল হোসেন সরকার বলেন, 'স্কুল খোলার ঘোষণায় ছাত্রছাত্রীদের ইউনিফর্ম বানানোর চাপ পড়েছে। এখন আর নতুন করে অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না। আগে যা নেওয়া হয়েছে, সেসব অর্ডারের পোশাক রাত-দিন জেগে তৈরি করা হচ্ছে। ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত পোশাক ডেলিভারি দেওয়া হবে। গত বছরের ২৫ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরে শেষবারের মতো ক্লাস করেছিল ৯ বছর বয়সী তৃষা। আহম্মদউদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তৃষা দীর্ঘ ৫৩২ দিন পার করেছে ঘরে বসেই। পরবর্তী সময়ে অনলাইনে ক্লাস করলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান, খেলার মাঠ আর বন্ধুদের খুব অনুভব করছিল। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় বেশ উৎফুল্ল ছোট্ট তৃষা। তবে দুই বছর আগে তৈরি স্কুল ইউনিফর্ম তার গায়ে লাগছে না। তাই বৃহস্পতিবার তড়িঘড়ি করে স্কুল ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার করলেও ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ডেলিভারির সময় দিয়েছেন দোকানি। এ নিয়ে তৃষার মা শাহনাজ পারিভিন এই প্রতিবেদককে বলেন, 'দুই সেট ইউনিফর্ম তৈরি করছি। আর এতে কাপড়ের দামসহ ইউনিফর্ম তৈরির মজুরি রাখা হচ্ছে এক হাজার ৯০০ টাকা।'

অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও নতুন ইউনিফর্ম তৈরি করছে। স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত আসায় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবককে, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বাড়ন্ত বয়সের শিক্ষার্থীদের নতুন ইউনিফর্ম সংগ্রহের জন্য ছুটতে হচ্ছে। কারও কারও ইউনিফর্ম পুরোনো হয়ে গেছে। আবার বাক্সবন্দি থাকায় অনেকের ইউনিফর্মেই হলদে ছোপ পড়েছে। এদিকে, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত এক বা একাধিক দর্জি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম মাপ ও নির্ধারিত মজুরি দিয়ে বানিয়ে দেয়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে তৈরি ইউনিফর্ম থাকে, মাপ জানিয়ে দিলে সেগুলো কিনতে পাওয়া যায়। 

জেলার বেশ কয়েকটা স্কুল-কলেজসহ আরও কয়েক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু ইউনিফর্মের মাপ বললেই তৈরি ইউনিফর্ম দেওয়া হয়। যেখানে প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম লাগানো থাকে। এসব তৈরি ইউনিফর্মের মূল্য ৭০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।আহম্মদউদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদ্রিত কায়সার। গত বছর ২৬ মার্চ স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে সেও ঘরে বসেই দিনরাত্রি পার করেছে। অনলাইনে ক্লাস করেছে। আদ্রিত এর মা লুবনা এই প্রতিবেদককে বলেন, 'শুধু যে ইউনিফর্ম গায়ে লাগছে না, তাই নয়। জুতাও কিনতে হবে। কারণ আদ্রিত বড় হয়েছে। ফলে সংকটের এই সময়েও প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ করে ইউনিফর্ম আর জুতা কিনতে হচ্ছে। স্বচ্ছ সরকারও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুল খোলা ও নতুন ইউনিফর্ম পাওয়ার আনন্দে সে এখন বিভোর। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি জীবন থেকে সে মুক্ত হবে। আবার যুক্ত হতে যাচ্ছে স্কুলের পাঠদানে।

‘রংধনু’র কর্নধার বেলাল হোসেন সরকার বলেন, গত দেড় বছরের বেশিরভাগ সময়ই দোকান বন্ধ ছিল। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দুইজন কর্মচারীকে বিনা বেতনে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের স্কুল খোলার খবরে ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার পাচ্ছি। তাই জরুরি ভিত্তিতে আশপাশের টেইলার্সের তিনজনকে কাজে লাগিয়েছি। শিশুদের খুশি করতেই রাত-দিন কাজ করছি।