সুন্দরগঞ্জে বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ন, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১২:২৪ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার শাখা নদীর ওপর নির্মিত একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হন তারাপুর ইউনিয়নসহ অন্তত বিশ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। পাঁচ বছর আগে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন স্থানীয়রা। কিন্তু গত দুই বছরের প্রবল বন্যায় সাঁকোটিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলার দুর্গম চরে চরখোর্দ্দা ও লাটশালা গ্রামে গেলে চোখে পড়ে সেতুর জরাজীর্ণ অবস্থা। বর্তমানে নড়বড়ে সাঁকোটির বেহাল দশা আর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিদিন নদী পার হতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তবে নদীতে পানি বেশি থাকলে সেই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে চরাঞ্চলের মানুষজন। মূমুর্ষ রোগী পরিবহন ও জরুরি চিকিৎসাসেবা ব্যাহতসহ এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্যে বাজারজাতকরণে খরচের পরিমাণ বেশি হয়। তা ছাড়া প্রবল বর্ষায় নদী ফুলে-ফেঁপে উঠলে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় থাকে না। তিস্তার শাখা নদীর ওপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি এই সাঁকোটির ওপর দিয়েই সুন্দরগঞ্জ ছাড়াও কুড়িগ্রামের উলিপুর, রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার লোকজনও যাওয়া-আসা করে থাকে। বর্তমানে সাঁকোটির অবস্থা এতটাই বেহাল হয়েছে, কোনোমতে হেঁটে চলাচল করা যায়। মোটরসাইকেল কিংবা রিকশার চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক আগ থেকে। সেতু নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।এ পথে চলাচলকারী রাজু মিয়া নামের এক দিনমজুর বলেন, দুর্বল সাঁকোটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কিছুদিন আগে সুন্দরগঞ্জ থানার এক পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেল নিয়ে এই সাঁকো পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেলসহ নদীতে পড়ে যান। নদীতে পানি কম থাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেন তিনি। তাই এখানে একটা সেতু খুবই জরুরি এখন। কিন্তু দুঃখজনক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। চরখোদ্দা গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ সারা বছর নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থাকে। বিশেষ করে গর্ভবতী বা বয়স্ক কোনো লোক অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এই সাঁকোর ওপর দিয়ে পার হতে অনেক বেগ পেতে হয়। এখানে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলে এই এলাকার মানুষজন কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পেত। একই এলাকার নাজমুল নামে আরেকজন বলেন, সেতু নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও গত ২০ বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। কবে হবে, তাও বলা যাচ্ছে। অচিরেই যেন এখানে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালা চরের বাসিন্দা মতিয়ার মিয়া বলেন, চর থেকে সুন্দরগঞ্জ শহরে যাওয়ার একমাত্র রান্তা এটি। সাঁকোটি পারাপার হতে প্রায়ই আমাদের নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, এখানে একটি সেতু নির্মাণ করলে হাজারো মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। 

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে তিস্তার শাখা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে চরখোর্দ্দা ও লাটশালা গ্রামের তিস্তা শাখা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে উপজেলা প্রকৌশল অফিস। বরাদ্দ এলেই এখানে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।