আগুনে পুড়ে ৭ পরিবারের স্বপ্ন ভস্মিভুত

দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৩৯ অপরাহ্ন, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১:৪৩ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

ঘরের ভিতরে বিদু্যতের সুইচ বোর্ড থেকে সূত্রপাত হয় আগুনের। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারা ঘরে। ধীরে ধীরে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশপাশের সবগুলো ঘরে। দমকল বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত্ম আগুন নিয়ন্ত্রণ আসলেও ততÿণে ভস্মিভুত হয়ে যায় ৯টি ঘর। আগুন লাগা থেকে বাঁচাতে গ্রামবাসী ভেঙ্গে ফেলে আরো দুইটি ঘর। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৭ পরিবারের বেচে থাকার সকল সম্বল। মর্মান্ত্মিক ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের খলেয়া নন্দরাম এলাকার কওলাপাড়া গ্রামে। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১১টায় ওই গ্রামের নজির হোসেনের পুত্র আজিজুল হোসেনের ঘরে আগুনের সূত্রপাত হয়ে প্রায় ৭টি পরিবারের ১১টি ঘর ভস্মিভুত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের খলেয়া নন্দরাম এলাকার আজিজুল হোসেন তার শিশু সন্ত্মানকে বাবা মায়ের কাছে রেখে জীবিকার সন্ধানে কয়েকদিন আগে পাড়ি জমায় রাজধানী ঢাকা শহরে। সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১টার দিকে আজিজুলের ফাকা ঘরে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দ্রম্নতগতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো কয়েকটি ঘরে। চিৎকার চেচামেচিতে এলাকার মানুষ এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। এরই ফাঁকে ৯৯৯ নম্বরের সাহায্যে খবর দেওয়া হয় তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দমকল বাহিনীকে। কিন্তু এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক হওয়ায় দমকল বাহিনীকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়। দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই এলাকার লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু ততÿণে আগুনে পুরে ছাই হয়ে যায় নজির হোসেন, নজির হোসেনের পুত্র আজিজুল হোসেন ও নাজিমুল হোসেন, ভাই আনারম্নল হোসেন, আনারম্নলের ছেলে শাহিবুল হোসেনসহ পাঁচ পরিবারের ৯টি ঘর ও ঘরের ভিতরে থাকা ক্যাশ টাকা ও আসবাবপত্রসহ প্রতিটি পরিবারের প্রায় ৫ লÿাধিক করে টাকা। আগুন নিয়ন্ত্রণের এক পর্যায়ে এলাকাবাসী লাবলু মিয়া ও আবু বক্করের দুইটি ঘর ভেঙ্গে দিয়ে আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া থেকে বাচিয়ে নিলেও ব্যাপকভাবে ÿতিগ্রস্থ হয় ঘরের টিন ও ঘরের ভিতরে থাকা আসবাবপত্রের। পড়নের একটি মাত্র বস্ত্র ছাড়া কোন কিছুই বাদ যায়নি পরিবারগুলোর। এতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে ÿতিগ্রস্থ পরিবারগুলো। নজির হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছোট ছেলে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র এনামুল হোসেন (২১) প্রায় এক বছর ধরে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত্ম। জমি বিক্রি করে ছেলেকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ছেলের চিকিৎসার জন্য কয়েকদিন আগে জমি বিক্রির প্রায় এক লÿ টাকা ছিল ঘরের ভিতরে বিছানার তলে। ঘরে আগুন লাগার পর কিছুই বের করে নিয়ে আসতে পারিনি। এখন কি করে ছেলের চিকিৎসা করাবো আর সংসারই কিভাবে চালাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। নজিবুলের ছোট ভাই আনারম্নল হোসেন বলেন, মেয়ের বিয়ের জন্য কষ্ট করে জমানো প্রায় দুই লÿ টাকা ছিল বাক্সের ভিতরে রাখা কাপড়ের ভাজে। সবকিছু আগুনে পুইরা গেছে হামার। এখন এই আগুনে পোড়া সংসারটা কেমন করি আবার নয়া করি গড়ে তুলিম আর বেটিক কেমন করি বিয়াও দেইম কিছুই বুঝির পাওছোং না। সেখানে নজির হোসেন ও আনারম্নল হোসেনের শতবর্ষী মা চিনিমাই বেওয়াকে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া কাপড়, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের অংশ বিশেষ নিয়ে বিলাপ করতে দেখা করতে দেখা যায়। 

তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানান, তারা ওই গ্রামে অগ্নিকান্ডের খবর পায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে। খবর পাওয়ার পর তারা তাৎÿনিক ঘটনাস্থলে রওয়ানা দেয়। প্রায় ১২টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দেখতে পায় এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আগুন নিভে গেছে। এরপর তারা সেখান থেকে ফিরে আসে। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত সেসবের বিষয়ে কোন খোঁজ নেয়নি দমকল বাহিনীর সদস্যরা। 

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ÿতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাড়িয়ারকুঠি ইউপি চেয়ারম্যান হারম্নন-অর-রশিদ বাবুল তার ব্যক্তিগত হতবিল হতে প্রায় ১৪ হাজার টাকার চেক প্রদান করেছেন বলে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদ ও ÿতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর সূত্রে জানা গেছে। 

বুধবার উপজেলা প্রশাসনের পÿ থেকে উক্ত পরিবারগুলোর মাঝে ঢেউটিন বিতরণ করা হবে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্ত্মবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন। 

দিপক রায়

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি