সাদুল্লাপুরে ঘাঘটের ভাঙনে নিঃস্ব হাজারো পরিবার

আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ন, ২০ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ১০:১৭ পূর্বাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

নাব্যতা সংকটে পানির প্রবাহ কম থাকলেও গাইবান্ধার ঘাঘট নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে নদী পাড়ের ২৬ কিলোমিটারের দীর্ঘ একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বহু সরকারি ছোট বড় স্থাপনা, স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ একটি গুচ্ছগ্রামও। তাছাড়া গত এক বছরে এখানকার হাজারো পরিবারের শত শত হেক্টর আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ চলাচলের রাস্তা বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে চলা ঘাঘট নদীটি গিয়ে ঠেকেছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। দুই জেলার সীমান্তবর্তী হলেও পুরো নদটি রয়েছে গাইবান্ধার মানচিত্রে। অথচ নদীর ওপারে নদী শাসনসহ জিও ব্যাগ, ব্লক নির্মাণসহ নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। বন্যার সময় উজানের ঢলে পানির চাপ এসে ভর করে গাইবান্ধা অংশে। এ কারণে এ পাড়ে অনবরত ভাঙনের সৃষ্টি হলেও নজর নেই কর্তৃপক্ষের। 

সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুরের ছান্নার ঘাট থেকে নাটির ছাড়া, রসূলপুর ইউনিয়নের কাটা নদী মুখ হয়ে দামোদরপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় এলাকার কুটিরপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার নদী পাড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০টিরও বেশি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শতশত হেক্টর আবাদি জমি, ঘর-বাড়ি, গাছপালাসহ চলাচলের রাস্তা।

এলাকাবাসি জানায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ হয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলার টুনির চর পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ কিলোমিটার ঘাঘট পাড়ে রয়েছে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ বাঁধেই আশ্রয় হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের। কিন্তু প্রতি বছরের বন্যা আর নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অধিকাংশরাই। অনেকে মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়ে পথে বসেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বহু সরকারি ছোট বড় স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদসহ গুচ্ছগ্রামও। যে কোন মহুতেই এসব স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে শঙা বসবাসকারীদের।ঘাঘটের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। তাছাড়া বাঁধ সংলগ্ন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহাবাজ, দক্ষিণ সাহাবাজ, মাস্টারপাড়া ও আকন্দপাড়া গ্রামগুলো রয়েছে ভাঙন আতঙ্কে। এছাড়া সাদুল্লাপুর উপজেলার রসূলপুর ইউনিয়নের প্রামানিকপাড়া, রহমতপুর, চাঁন্দেরবাজার ও মহিষবান্দি গ্রামসহ দামোদরপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড়, কুটিপাড়া, ভাঙ্গারদহ ও জামুডাঙ্গা গ্রামের হাজারো পরিবারের দিন কাটছে আতঙ্কে। 

নদী ভাঙনের স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া দুলা মোল্লা বলেন, ‘এই বাঁধ দিয়ে সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। মালামাল পরিবহণ করে। বাঁধ ভাঙতি ভাঙতি প্রায় শেষ। কিন্তু সংস্কার নাই। বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নাই। আমরা তো অসহায় হয়ে পড়েছি।’এ বাঁধেই গত ১০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন আনজুয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘নদী অনেক দূরে আছিল। এখন অনেক কাছে আসচে। অনেক ঘরবাড়ি চলি গেছে নদীত। অনেক বাঁচ্চা কোচ্চা পানিত পড়ি মরিও গেছি। শ্রীরামপুর গ্রামের আজিজার রহমান মাস্টার বলেন, কমপক্ষে ৪০ বছর আগে রাস্তাটা (বাঁধ) হচে। এটি একটা ঘাট আছিল; সেটা ভাঙতি ভাঙতি ওপারে চলি গেছে। বন্যার টাইমে এক গালা পানি হয়। গত ৫০ বছরেও এই এলাকায় ভাঙন রোধে একটা কাজও হয় নাই। 

নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের ২ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি রহিম বাদশা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বিষয়টি স্থানীয় এমপিকে অবহিত করেছি। আশা করি তিনি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবেন। 

এ নিয়ে গাইবান্ধা জেলা তাঁতী লীগের আহবায়ক এসএম আহসান হাবীব স্বাধীন বলেন, প্রতি বছরেই নদী ভেঙে ভেঙে এদিকে চলে আসছে। পূর্বে নদীটি সোজা ছিল; কিন্তু ইদানিং নদী ঘন ঘন বাক নিয়েছে। এজন্য ভাঙন আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ি) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এই জনপদকে রক্ষার জন্য প্রতিনিধি পাঠিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমরা আশা করছি শীঘ্রই এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। 

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দফতরে চাহিদা পাঠানো হবে।