পত্নীতলায় ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা

মাসুদ রানা,পত্নীতলা( নওগাঁ) প্রতিনিধি
মাসুদ রানা,পত্নীতলা( নওগাঁ) প্রতিনিধি মাসুদ রানা,পত্নীতলা( নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:২২ অপরাহ্ন, ১৭ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১:৩০ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

নবান্ন শব্দের অর্থ “নতুন অন্ন”। নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমণ ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শত বছরের বেশী সময়  ধরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের  পদ্মপুকুর  গ্রামের পাশে পদ্ম পুকুর সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে  হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ  মেলা। প্রতিবছরের ইংরেজি তারিখের ১৭ নভেম্বরে বসে এই মেলা। করোনার কারনে গত দুবছর মেলা তেমন ভাল বসেনি তবে এবারের মেলা জমেছে বেশ চমৎকার ভাবে।

নবান্নের এই মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের মধ্য এক অন্য রকম উৎসব  আমেজে মুখোর হয়ে ওঠেছে আসপাশের ১০/১২ টি গ্রাম। বাড়িতে বাড়িতে শীতের পিঠা পুলি, নতুন ধান থেকে পাওয়া চালের পায়েশ রান্না করা হয়। পাশাপাশি কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠার আগে বেশকিছু প্রস্তুতি নিতে হয় কৃষকদের। ধানচালা কুলা, চালুনি, ডালা ইত্যাদি ক্রয় হয় তাদের। এজন্যই নবান্নের মেলার আয়োজন করা হয়। গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতেই জামাই মেয়ে সহ বিভিন্ন  আত্মীয় স্বজন আসা, চলে খাওয়া দাওয়ার ধুমও। মাংস পোলাও, পাটিসাপটা,দুধকুসলি, কানমুচরি, পাকোয়ান পিঠা, রস পিঠা  সহ নানান পিঠাপুলি  মিষ্টি মিঠাই খাওয়ার ধুম।  নিতান্ত গরীব হলেও ১ কেজি জিলাপি কিনবেই।  

এক দিনের এ মেলা উপলক্ষে  বিভিন্ন  এলাকা থেকে  দোকানীরা আগের দিন  এসে দোকানে  মিষ্টি,  বাঁশ, বেত, মাটির তৈরী নকশি পাতিল, মাটির ব্যাংক, পুতুল , কাঠের তৈরী ফার্নিচার,  কসমেটিক, খেলনা, বাশি, বেলুন, ঘুর্নি, লোহার তৈরী হাঁসুয়া বটি, চাকু,কাগজের ফুল  নানা রকম মুখরোচক খাবারেরর  দোকান দিয়ে  নানান জিনিসপত্রের পশরা সাজিয়ে বসেন। 

শ্রী নিতাই কুমার পাল নামের এক দোকানি জানান, র্দীঘ ৫০ বছর ধরে এই পদ্মপুকুর নবান্নের মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করে আসছি।  শুরুর দিকে আমার দাদু এই মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করতেন। এরপর আমার বাবা অমুল্য চরন পাল তারপর আমি এসব বিক্রি করছি।  এখানে মাটির তৈরী হাড়ি,পাতিল, ঢাকোন, প্রদীপ দেওয়া ছোট বাটি, ধুপ জালানো ধুপতীসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করি আমরা। 

মেলাতে বাশেঁর তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা রেবেকা পাহান জানান, সারা বছর আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটে। নবান্নের এই সময়টা আমরা বাশেঁর তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করি। মেলাতে আমরা বাশেঁর তৈরী কুলা, ঢাকনা, ঝাল ডালা,খইচালা, চালুন, মাছ রাখা খলইসহ বাশেঁর তৈরী নানা উপকরণ বিক্রি করি। প্লাস্টিকের পণ্য বাজারে আসায় আমাদের আয় কমে গেছে। 

স্থানীয় রাসেল, হাবিব সহ অনেকেই   জানান, আসলে এই মেলা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা সঠিক বলা মুসকিল তবে বাবা দাদার হাত ধরে খুব ছোট থেকে এ মেলায় আসছি।  বছরের এই এক দিনের জন্য নবান্নের মেলা হয়। মেলাতে এই এলাকার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষেরা আসেন। এখানে সারা বছরের সংসারের প্রয়োজনীয় নানা রকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়। মানুষেরা এগুলো কিনে সারাবছরই ব্যবহার করে থাকেন।  

মেলার এক পাশে চলে  ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে।

নজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী মনজ কুমার জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এ মেলা হয়ে আসছে।মূলত  নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি। তবে  এ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংক্রান্তী উপলক্ষে কালি পুজা অর্চনা করেন এখানে। ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আসেন এ মেলায়।