বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব

আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ন, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১:০৩ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নে পুটিহারি মাঝাপাড়া এলাকার জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পাঁচ জঙ্গিকে আটক করেছে র‍্যাব।

এ সময় জব্দ করা হয়েছে আইইডিসহ বিপুল পরিমান বিস্ফোরক, অস্ত্র ও গোলাবারুদ। বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যা বের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন শনিবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেল  তিনটায় রংপুর র্যা ব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদর ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। এসময় তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ম্যানডেটের আলোকে জঙ্গি দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে এলিট ফোর্স র্যা ব।

র্যা বের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত ২,৬৫৪ জন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তন্মধ্যে ১,৩৮৯ জন জেএমবি সদস্য। খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যা বের অভিযানে গ্রেফতার হয় জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের ভাই, আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়ালসহ বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতা। ২০০৭ সালে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। অতঃপর তেমন উল্লেখযোগ্য জঙ্গি হামলা সংগঠিত হয়নি। ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার মাধ্যমে পুনরায় জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। হলি আর্টিজান ঘটনা পরবর্তী র্যা ব জঙ্গিদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সক্রিয় সদস্য ও হামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী গ্রেফতারে সক্রিয় ছিল। হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও তৎকালীন জঙ্গি সংগঠন জেএমবি এর আমির সারোয়ার জাহান, আসীম আজোয়াত,  মানিক সহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করে র্যা ব। 

র্যা বের অভিযানে কেন্দ্রীয় দাওয়াতি শাখা প্রধান, সূরা ও শরীয়া বোর্ড সদস্য, মহিলা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং বেশ কয়েকজন অতি গুরুত্বপূর্ণ আইটি বিশেষজ্ঞকে গ্রেফতারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনকে দূর্বল করে দেয় র্যা ব। এভাবে র্যা বের সময়োচিত পদক্ষেপ ও তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারিতে অংকুরেই নসাৎ করে দেয়া হয় জঙ্গি হামলা এবং হামলার সকল পরিকল্পনা। হলি আর্টিজান পরবর্তীতে র্যা বের  কর্মতৎপরতায় ১,৪৯৬ জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার হয়। তন্মধ্যে ৮১৬ জন জেএমবি সদস্য। এছাড়া অভিযানে নিহত হয় বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে রোল মডেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “জিরো ট্রলারেন্স” নীতির আলোকে র্যা বি জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধান এবং আইন-শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মতৎপরতায় এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এছাড়া জঙ্গি আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহন করে র্যা ব। র্যা ব ডি-রেডিক্যালাইজেশন এ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন” এর আওতায় ইতিমধ্যে ১৬ জন শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। বর্তমানে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে একটি পরাজিত শক্তি। আইন -শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর্যূপরি জঙ্গি বিরোধী অভিযান ও কর্মতৎপরতার ফলে জঙ্গিদের তৎপরতা প্রায় শুন্যের কোটায়। তথাপিও র্যা ব আত্মতুষ্টিতে ভূগছে না। আমরা আমাদের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখেছি। র্যা ব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগতে জঙ্গিদের গতিবিধি সম্পর্কে অনুসন্ধান অব্যহত রাখছে। র্যা ব সাইবার মনিটরিং সেল অন-লাইনে নীলফামারীতে জঙ্গিদের সন্দেহেজনক গতিবিধি লক্ষ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার মধ্য রাত হতে অদ্য শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত র্যা ব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যা ব-১৩ এর অভিযানে নীলফামারী সদরের মাঝাপাড়া হতে জেএমবি’র নীলফামারীর রংপুর অঞ্চলের জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান নীলফামারী জেলার সদর থানাধীন উত্তর মুশরত কুখাপাড়া গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে আহিদুল ইসলাম আহিদ ওরফে পলাশ (২৬), এবং তার অন্যতম সহযোগী নীলফামারী জেলার সদর থানাধীন পশ্চিম কুচিয়ামোড় পাঠানপাড়া গ্রামের ওয়াজুউদ্দীন মাসুদের ছেলে ওয়াহেদ আলী ওরফে আব্দুর রহমান (৩০), একই থানাধীন দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের তছলিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডাঃ সুজা (২৬), উত্তর মুশরত কুখাপাড়া গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে  জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ জোবায়ের (২৭), এবং একই এলাকার সোনারাই কাচারীপাড়া গ্রামের মৃত রজব আলীর ছেলে নূর আমিন ওরফে সবুজ (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে জব্দ করা হয় বোমা তৈরীর সরঞ্জাম, বোমা তৈরীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য, ১টি অস্ত্র (পিস্তল), ১টি ম্যাগজিন ৫ রাউন্ড গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা জেএমবি’র সামরিক শাখার সদস্য। সামরিক শাখার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা আইইডি তৈরি ও আইইডি তৈরি করার প্রশিক্ষণ অনুশীলন এবং নাশকতামূলক হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। বিগত ২/৩ মাস পূর্বে জঙ্গি আহিদুল ইসলাম ওরফে আহিদ ওরফে পলাশ এর বাড়ীতে ইপ্রভাইজড এক্সপ্লোসিভস ডিভাইস (আইইডি) তৈরী করছিল। উক্ত বোমা তৈরীর সময় গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আহিদুল এর বাড়ীতে আগুন ধরে যায়। তারা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব পেইজ দেখে কিভাবে বোমা তৈরী করতে হয় এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করে। জেলখানায় অন্তরীন থাকা শীর্ষ জঙ্গিদের জেলখানা হতে আদালতে নিয়ে যাওয়া আসার পথে হামলা চালিয়ে তাদেরকে মুক্ত করা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার লক্ষ্যে তারা এই বোমাগুলো তৈরি করছিল। গ্রেফতারকৃতরা জানায়- তারা অনলাইনে রংপুর অঞ্চলের আমিরের নির্দেশনায় বেশ কয়েকদিন যাবৎ আইইডি তৈরী করে জঙ্গি শরীফ এর বাড়ীতে রাখে। তারা রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০-২৫ জনকে জঙ্গি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলের বেশ কয়েকজন শ্রমিক, অটোচালক, টেইলার ইত্যাদি শ্রেণীর পেশাজীবীদের জঙ্গিবাদে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত জঙ্গি আহিদুল ইসলাম ওরফে আহিদ ওরফে পলাশ একটি খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানীর কোয়ালিটি চেকার ছিলেন।