রংপুরে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট খপ্পরে সাবেক সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর, অতঃপর পিবিআই এর হাতে আটক

আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ন, ০৫ অগাস্ট ২০২১ | আপডেট: ৯:৩৮ অপরাহ্ন, ০৫ অগাস্ট ২০২১

রংপুরে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট এর খপ্পরে পরে সাবেক সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর। জান যায় ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে প্রতারণার ঘটনায় তাসনিম সরকার ওরফে অনামিকা (৩৮) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। গ্রেফতার নারী সাবেক সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর (কারা অফিসার) আনজু মিয়াকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণের আংটিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়েছেন। 

পরবর্তীতে প্রতারণার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য সাবেক কারা অফিসার আনজুকে মাদকাসেবী দেখিয়ে মাদকাসক্ত বলে জোরপূর্বক সুস্থ্য জীবন নামক একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করান। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। 

জানা গেছে এর আগে বুধবার (৪ জুলাই) বিকেলে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী থেকে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দানকারী ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার অনামিকা কাটাবাড়ী এলাকার শাহজাহান সরকারের মেয়ে।

পিবিআই এসপি জানিয়েছেন- গত ০২ আগস্ট রংপুর নগরীর সিও বাজার কেল্লাবন্দের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন আনজু মিয়া (৫১)। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রংপুর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পর দিন ০৩ আগস্ট পিবিআইয়ের একটি টিম নগরীর ডিসির মোড়স্থ ‘সুস্থ জীবন মাদক নিরাময় কেন্দ্র’ থেকে নিখোঁজ আনজু মিয়াকে উদ্ধার করা করে।

আনজু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পিবিআই আরও জানান- ছয় মাস পূর্বে বিমান ভ্রমণের সময় অনামিকার সঙ্গে পরিচয় হয় আনজু মিয়ার। এরপর তাদের দুজনের মধ্যে ব্যক্তিগত ফোন নম্বর আদান-প্রদান ও কথাবার্তা হয়। গত ০২ আগস্ট সকালে অনামিকা ফোন করে আনজুকে রংপুর জিলা স্কুলের মোড়ে ডেকে নেন। তিনি জানান- আনজু মোটরসাইকেল চালিয়ে জিলা স্কুল মোড়ে পৌঁছলে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে অনামিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সেখানে এগিয়ে গেলে তাকে দু-তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি ঘিরে ফেলেন। পরে জোরপূর্বক পার্শ্ববর্তী সুস্থ্য জীবন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায়।

এর পর আনজুর দেহ তল্লাশি করে নগদ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা, একটি স্বর্ণের আংটি ও একটি হাতঘড়ি সহ ড্রাইভিং লাইসেন্স কেড়ে নেয় তারা। এ সময় অনামিকার অনুরোধে মাদকাসক্তের চিকিৎসার জন্য আনজুকে নিরাময় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানায় ওই অপরিচিত ব্যক্তিরা।

পরে জব্দকৃত টাকা ও স্বর্ণের জিনিসপত্র নিরাময় কেন্দ্র হতে নিয়ে নেন অনামিকা। পরবর্তীতে অন্যান্য আনুষঙ্গিক চিকিৎসাপত্র ও প্রয়োজনীয় কাপড়সহ এসে আনজুর মোটরসাইকেলটি নিয়ে যাবেন জানিয়ে সেখান সটকে পড়েন অনামিকা ও তার লোকজন। 

এদিকে আনজুর নিখোঁজের বিষয়টি পিবিআইয়ের নজরে এলে ০৩ আগস্ট তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এরই মধ্যে নিরাময় কেন্দ্র আনজুর ডোপ টেস্টও করেন।

এদিকে ঘটনায় জড়িত ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেওয়া প্রতারক তাসনিম সরকার ওরফে আনামিকাকে গ্রেফতারে অভিযানে নামের পিবিআই। অভিযানের এক পর্যায়ে বুধবার দুপুুরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থেকে অনামিকাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন- প্রতারক অনামিকা ও তার সঙ্গে থাকা অন্য সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ে নিত্যনতুন কৌশলে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আসছিল। এই চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে। অনামিকাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।