পলাশবাড়ীতে চলতি মৌসুমে আমন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি আল কাদরি কিবরিয়া সবুজ, (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৫৯ অপরাহ্ন, ১৯ অগাস্ট ২০২১ | আপডেট: ১০:৫৯ অপরাহ্ন, ১৯ অগাস্ট ২০২১

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে শেষ মুহূর্ত্বে চলতি মৌসুমে আমন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।অনাবৃষ্টি এবং শেষ পর্যায় অতিবৃষ্টির কারণে আমন ফসল উৎপাদন লক্ষ মাত্রা অর্জনে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায় নিরলস কাজ করছেন।

চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় মোট ১৪ হাজার ১’শ ৯২ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। চারা রোপণ লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী আমন চাষ করতে প্রায় ৭’শ ৬০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরী করা হয়।

এ হিসেবে ১ হেক্টর জমির চারা দিয়ে ২০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন সম্ভব হয় বলে কৃষি অফিস সূত্র জানায়।এবারে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে প্রত্যাশানুযায়ী পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন চাষাবাদ শুরু করা হয়। শেষ মূহুর্তে অতিমাত্রায় ভারী বৃষ্টির মুখ দেখেন কৃষকরা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় অতিমাত্রায় বৃষ্টি হওয়ায় চারা রোপণ কার্যক্রমে দেখা দেয় বিপত্তি। এদিকে পানি সেচের মাধ্যমে রোপনকৃত আমন চারা তলিয়ে যায় পানির নিচে।

উপর্যুপরি বৃষ্টিতে পানি সয়লাব হবার কারণে রোপিত চারা আংশিক সামান্য বিনষ্ট হয়। পরবর্তীতে জমির শূন্যস্থান সমূহে দ্বিতীয় বারসহ শেষ মুহূর্ত্বে আমন চারা রোপণে কৃষকরা মহা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। পানি সেচসহ অতিরিক্ত চারা রোপণে উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যয়ে কৃষকরা তাদের জমিতে রোপণ কাজ শেষ করতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছেন। এতসব করে ফসল ঘরে তুলে এবার লাভের মুখ দেখা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার উপজেলার তৃনমুল বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের চাষযোগ্য জমিতে কৃষকরা শেষ মূহুর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরআগে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেচ পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানির ওপরেই ভরসা করে আমনের চারা রোপন শুরু করেন কৃষকরা।

উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম রামচন্দ্র পুর গ্রামের কৃষক নিখিল চন্দ্র, আবুল হোসেন ও রঘুনাথ বলেন, তারা প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করে থাকেন। প্রতি বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে বিগত বছরের তুলনায় এবার ব্যয় বেশি দাড়াবে। সঠিক সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খরচের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে গেছে। একই রকম কথা বলেন, খোর্দ্দটেংরা গ্রামের লিটন মিয়া, বেংগুলিয়া গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম, পৌর এলাকার উদয়সাগর গ্রামের  রঞ্জু মিয়া।

তারা জানান, বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমন চারা রোপণের প্রস্তুতি নিলেও শেষাবধি ব্যয় বহুল স্যালো মেশিন সেচের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপণ করেন। আগাম লাগানো আমন ধানের জমি গুলোয় প্রথমতঃ কোথাও পানির অভাবে আবার শেষ পর্যায় কোথাও অতিরিক্ত পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে।

অনাবৃষ্টি এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে কৃষকরা কমবেশি ফসল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন।সেইসাথে কৃষি বিভাগের গৃহীত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।উপজেলার প্রায় সর্বত্রই এখন বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমন চাষীদের উপকার এবং অপকার দু'টোই সমানে-সমান হওয়ায় ভূক্তভোগি কৃষক কূল বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা.ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, এবছর উপজেলায় ১৪ হাজার ১শ’ ৯২ হেক্টর জমিতে আমন ধান চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টির অভাব এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমন চারা রোপন কাজে কিছুটা বিঘ্ন হলেও সময়ের গড়পর্তায় সবমিলিয়ে শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ আমন ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

তদারকিতে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আমন ফসল উৎপাদন কিছুটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা মাথায় রেখেই তারা প্রায় সবসময়ই নিরলস মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে।