শিক্ষককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুইজনকে প্রেফতার করেছে পুলিশ

আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি আপেল মাহমুদ, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:১৫ অপরাহ্ন, ২০ অগাস্ট ২০২১ | আপডেট: ১১:২২ পূর্বাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে অভিনব কায়দায় ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে’ অর্থ আদায়ের অভিযোগে স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গেছে দিনাজপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে অভিনব কায়দায় ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে’ অর্থ আদায়ের অভিযোগে রংপুর থেকে একাধিক নাম ব্যবহারকারী শাহীনা বেগম ওরফে শীলা আক্তার ওরফে ইসা (৩৩) ও মমিন মিয়া (৩৪) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঘটনার বিষয় নিশ্চিত করে শুক্রবার (২০ আগষ্ট) বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, দিনাজপুরের বাসিন্দা সেই শিক্ষক আগস্টের প্রথম সপ্তাহে স্ত্রীর দাঁতের সমস্যা নিয়ে দিনাজপুরের একটি ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে দিনাজপুর খানসামা উপজেলার কাচনিয়া গ্রামের কাশেম আলীর মেয়ে শাহীনা বেগম ওরফে শীলা আক্তার ওরফে ইসার (৩৩) সঙ্গে পরিচয় হয় তার। শিলা তখন নিজেকে ‘সেবিকা’ বলে পরিচয় দেন। এরপর মোবাইলে ফোনে শীলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হত ঐ প্রাইমারী শিক্ষকের। 

গত ১১ আগস্ট’২১ ওই শিক্ষককে পরিচিত চিকিৎসকের কাছে দেখানোর কথা বলে দিনাজপুর থেকে রংপুরে নিয়ে আসে শীলা। হোটেলে খাওয়া-দাওয়ার পর চিকিৎসক চেম্বারে আসতে দেরি হবে অজুহাত দেখিয়ে রংপুর নগরীর কটকিপাড়ায় ভাবির বাসা রয়েছে বলে ওই শিক্ষককে নিয়ে যায় শীলা।  এরপর বাড়িতে প্রবেশের ১৫ মিনিট পর পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে শীলার স্বামী মমিনসহ আরও দুই যুবক সেখানে প্রবেশ করে। সেখানে ওই শিক্ষককে শীলার পাশে বসিয়ে বেশকিছু ছবি তুলেন তারা। শীলা ওই শিক্ষকের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে, অন্যথায় ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তার ‘সম্মানহানি করবে’ বলে হুমকি দেয়। সেই সাথে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করলে তাকে হত্যা করা হবেও বলে হুমকি দেয়া হয়।  এমন পরিস্থিতিতে লোকলজ্জা ও ভয়ে ওই শিক্ষক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা শীলাকে পাঠান।

পরে ঐ শিক্ষক গত ১৯ আগস্ট বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে একপর্যায়ে অনুসন্ধানের পর শুক্রবার রাত দেড়টায় নগরী কটকিপাড়া থেকে শীলা ও তার স্বামী মমিনকে প্রেপ্তার করে পুলিশ। 

সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বলেন, শীলার স্বামী মমিন ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন। মমিনের আগের নাম তপন চক্রবর্তী এবং সে দিনাজপুর বোচাগঞ্জ সেতাবগঞ্জের মৃত গুরুচরণ চক্রবর্তীর ছেলে। শীলা বিভিন্ন সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করে রংপুর নগরী, পাবর্তীপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কৌশলে প্রেম অথবা নানা সম্পর্ক তৈরি করে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। 

এ চক্রের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ডিবি কর্মকর্তা। 

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ফারুক আহমেদ, এসআই আবু ছাইয়ুম তালুকদার, বাবুল ইসলামসহ অন্যরা।