চাঁদা না দেওয়ায় হাতের আঙ্গুল হারালো বগুড়া পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ও ধামইরহাটের মেধাবী ছাত্র আনারুল ইসলাম

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:৪৯ অপরাহ্ন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ৪:৫৫ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

নওগাঁর ধামইরহাটের মেধাবী শিক্ষার্থী আনারুল ইসলাম (২১) চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসীদের দ্বারা প্রহৃত হয়েছেন, হারিয়েছেন মহামুল্যবান ডান হাতের দুই আঙ্গুল। এই ঘটনায় রিক্সাচালক বাবা ও অন্যের বাড়ীতে কাজ করা মায়ের আকুতিতে পুরো গ্রামে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বগুড়া জেলা ডিবি পুলিশ বাড়ীতে এসে ভুক্তভোগীর বাড়ী ও তাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। নওগাঁ জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জিয়া সাইবার টিম বুধবার দুপুরে আনারুল ইসলামকে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে,  উপজেলার চক উমার (পাটারিপাড়া) গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আনারুল ইসলাম (২১) ২০১৭ সালে ধামইরহাট সফিয়া পাইলট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি’তে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করে জয়পুরহাট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে চান্স পান, সেখানে নতুন স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। ৪র্থ সেমিস্টার সম্পন্ন  করে ৫ম সেমিস্টারের জন্য বগুড়া পলিটেকনিকে ট্রান্সফার হন এবং চলতি মাসের ১২ সেপ্টেম্বর বগুড়া শহরের কলোনীর একটি ছাত্রাবাসে ওঠেন। সেখানে থাকাকালে গত ২১ সেপ্টেম্বর রুমমেট নাহিদ হাসান ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালে আনারুল ইসলাম বাড়ীর বাহিরে যান, কিছুক্ষণ পর আনারুল রাস্তায় পড়ে আছেন, মেসের খালা (বুয়া) এমন খবর রুমমেট নাহিদকে জানালে তাৎক্ষনিক খোজ নিতে এলে তাকে সেখানে না পেয়ে আনারুলকে ফোন করেন। আনারুল হাসপাতালে ভর্তি আছে জানতে পেরে রুমমেট নাহিদ হাসপাতালে যান, সেখানে উপস্থিত থানা পুলিশ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী আনারুল ইসলাম বলেন,‘আমি নাস্তা খাবার জন্য রুমের বাইরে এলে দু’জন অজ্ঞাত লোক আমার থেকে মোবাইল ও টাকা দাবী করে, আমি দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাকে মেসের দোতলার বাথরুমে নিয়ে হাত ও চোখ বেধে ডান হাতের দুটি (তর্জনী ও মধ্যমা) আঙ্গুল কেটে রাস্তায় ফেলে রাখে।’ অজ্ঞান অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে শমিজেক হাসপাতালে নিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বগুড়ার কলোনী এলাকায় তোলপাড় সৃস্টি হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে থেকে রিলিজ নিয়ে তাকে ধামইরহাট উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ীতে আনলে হামলাকারীদের আতংকে ভুক্তভোগী আনারুল ইসলাম ভুলভাল বকছেন, কখনো নিরব থাকছেন, কখনো বলছেন আমি মামলা করবো না, আমার ভবিষ্যতের জন্য কিছু করেদেন।
আনারুলের মা সাহারা খাতুন জানান, লকডাউনে আমার স্বামী অসুস্থ্য থাকায় ছেলে আনারুল নিজে রিক্সা চালিয়েছেন, কোন বাজে চলাফেরা তার নেই, ঘটনার পর থেকে আমার ছেলেকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে, মোবাইল ফোনে একাধিক ফোন করা হচ্ছে, আমি আমার ছেলের প্রতি করা বর্বরতার সুবিচার প্রার্থনা করছি।
বগুড়া সড়র থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সেলিম রেজা জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি, এখন পর্যন্ত কেউ থানায় আসেনি বা অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,‘স্বাধীন বাংলাদেশে এই বর্বরোচিত হামলা মেনে নেয়া যায় না, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী করছি।’