রঙ তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠছে দেবীর রুপ

মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:৪০ অপরাহ্ন, ০৯ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ৪:৪১ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪

শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, আর দিগন্তে জুড়ে কাশফুলের মেলা জানান দিচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই ধর্মাবলম্বীদের  কাছে দেবী দুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক ।প্রতিবছর অসুরের বিনাশ করতেই মা দেবী দুর্গা ধরাধামে আবিভূত হন। সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর করতেই এ পুজার আয়োজন।   দিন যতই এগিয়ে আসছে মণ্ডপগুলিতে শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে ততই মূর্ত হয়ে উঠেছে দেবীর রুপ। কোন কোন মণ্ডপে শিল্পীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় চলছে মাটির কাজ। আবার কোথাও কোথাও প্রতিমাগুলো রঙিন করার কাজে ব্যস্ত মালাকররা। তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তোলা হচ্ছে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক ও মহিষাসুর, লক্ষী,স্বরস্বতি ও তাদের বাহনের প্রতিমা। পদ্ম ও শিউলি লাবণ্য ছড়িয়েছে, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবার দেবী দূর্গা ঘোড়ায় আগমন করে দোলায় গমন করবেন।

আগামী  সোমবার( ১১ অক্টোবর) মহা ষষ্ঠীর পূজা অর্চনার মধ্য  দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নববমী শেষে  শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে এ উৎসবের। এদিকে হিন্দু পল্লী গুলোতে সাজ সজ্জায় উৎসবের আমেজ  বিরাজ করছে, ঘর বাড়ী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন  বিভিন্ন আলপনার ছাঁপ ও নতুন কাপড়  কেনাকাটা।  দেবীকে বরণ করে নিতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে পত্নীতলার  স্থায়ী-অস্থায়ী মণ্ডপগুলোতে।  আর মাত্র ক,দিন পরে ই ঢাকের তালে আরতি আর উলুধ্বনিত মুখরিত হবে মণ্ডপগুলো।  

সরকারি ভাব  পূজা  উদযাপনের জন্য মণ্ডপ প্রতি ৫শ কেজি চাল দেওয়া হয়  দশ বছর ধরে  একই পরিমাণ  অনুদান দেওয়া  হচ্ছে হিন্দু  সম্প্রদায়ের একাধিক ব্যক্তি জানান এ সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন । 

সংশ্লিষ্ট  সূত্রে জানা যায়  এবার উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায়  মোট ৮১টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হবে। নজিপুর পৌর এলাকায় ১৫টি, পত্নীতলা ইউনিয়নে ০৯, দিবরে ০৪, আকবরপুরে ০৪, মাটিন্দরে ০৬, কৃষ্ণপুরে ০৫, পাটিচরায় ০৮, নজিপুর সদর ইউনিয়নে ১৩, ঘোষনগরে ০৬ এবং আমাইর ইউনিয়নে ১১, টি। 

শুক্রবার  (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের  কেন্দ্রীয় বাসুদেব মন্দির,  ছোট চাঁদপুর, ঠুকনি পাড়ার মোড়, পালশা, পুঁইয়া  সহ  কয়েকটি মন্ডপে সরেজমিনে দেখা যায়, নজিপুর ছোট চাঁদপুর সর্বজনিন  মণ্ডপ প্রাঙ্গণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মালাকররা মাটির কাজ শেষ করে তুলির আঁচড়ে  রঙ এর প্রলেপ দিয়ে ফুটিয়ে তুলছে দেবীর রুপ। এখানে কর্মরত মালাকর  দুলাল চন্দ্রের সাথে কথা হলে তিনি জানান কাদামাটি ও রংতুলির মাঝেই তার বেড়ে ওঠা  খুব ছোট থেকেই তিনি প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন  এবার তিনি ৮ টি প্রতিমার কাজ নিয়েছেন  সবগুলির কাজ মোটামুটি শেষ শুধু রং দিলেই শেষ হবে এখন তাদের অনেক ব্যস্ততা। তিনি আরও জানান  প্রতিমার আকৃতি ও ডিজাইনের উপর মজুরি নেন তারা ২০ থেকে ৬০ হাজারের মধ্যে থাকে।   এই প্রতিমার  জন্য তিনি ৪০ হাজার টাকা মজুরী নিয়েছেন।  

ছোট চাঁদপুর মণ্ডপের সভাপতি বকুল দাস বলেন প্রতিবছরই আমাদের একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে এবারের প্রতিপ্রাদ্য  "ভ্যাকসিন নিন "  দেশের প্রতিটি মানুষ যেন  করোনা ভ্যাকসিন গ্রহন করেন এ  জন্য  এই প্রতিপাদ্য। স্বাস্থ্য বিধি  ও সরকারি বিধি নিষেধ  মেনেই আমরা পূজা উদযাপন করবো।

  কেন্দ্রীয় বাসুদেব মন্দরীরে দেখা যায় সকল কাজ শেষ করে  প্রতিমা প্রস্তুত করেছেন কেবল পূজার অপেক্ষা। এখানকার পুরোহিত রতন কুমার আচার্জ জানান বিশ্ব থেকে করোনা ভাইরাস নিপাত যাক সৌহার্দ্য শান্তি সম্প্রীতিতে মানুষ বসবাস করুক এটাই মায়ের কাছে চান তিনি।  

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পত্নীতলা উপজেলা  শাখার সাধারণ সম্পাদক গৌতম চন্দ্র দে বলেন, কেন্দ্রীয়  নির্দশনা অনুযায়ী এ বছর শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনা করা হবে ধর্মীয় গান ছাড়া   ডিজে গান বাজানো  মাদক সেবন করে কেউ  মাতলামি  করে আটক হলে  আমরা তার সুপারিশ করবো না। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পত্নীতলা উপজেলা  শাখার সভাপতি শিবনাথ চৌধুরী  বলেন,  বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের কারনে  এ বছর পূজার অনুষ্ঠানমালা শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সীমিত পরিসরে পূজা উদযাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা।

সে বিষয়ে উপজেলার সকল মন্ডপের  সভাপতিগণকে ডেকে মিটিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । স্বাস্থ্য বিধি ও  সরকারি  নির্দেশনা মেনে সকলকে পূজার অনুষ্ঠান করতে বলেছি। সরকারি  ভাবে প্রতিটি মণ্ডপে ৫ শ কেজি চাল অনুদান দেওয়া হয়েছে। 

পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শামসুল আলম  বলেন আসন্ন দূর্গা  পুজা  উপলক্ষে   আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকবে।  পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি আনসার ভিডিপি,  গ্রাম পুলিশ সদস্যদেরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে এছাড়া প্রধান পয়েন্ট গুলোতে পুলিশের  চৌকস অফিসার  থাকবে এবং  টহল পুলিশের টিম থাকবে।  এ ছাড়া মন্দিরে মন্দিরে নিজস্ব  সেচ্ছাসেবক টিম থাকবে, আশা করছি  শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পুজা উদযাপন হবে।  এখন  পর্যন্ত  কোন প্রতিমা ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলার  খবর পাওয়া যায় নি। 

উপজেলা  নির্বাহী অফিসার মো.  লিটন সরকার বলেন  সরকারী নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে পূজা উদযাপনের জন্য পুজা মন্ডপের  কমিটিকে অবহিত  করা হয়েছে।