কেন প্রক্রিয়াজাত চিনি বা সাদা চিনি এড়িয়ে চলবেন!

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:২৯ পূর্বাহ্ন, ০৪ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ১:২৯ পূর্বাহ্ন, ০৪ জুলাই ২০২১
প্রাগৈতিহাসিককালে চিনি ছিল না, তার পরিবর্তে ছিল মধু আর মিষ্টি ফল। ওগুলো নানা ধাপে ভেঙে শরীরের রক্তে মিশত। প্রক্রিয়াজাত চিনি (রিফাইন্ড সুগার) তা নয়। এগুলো সরাসরি রক্তে মেশে আর মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায় এর প্রভাব।

বর্তমানে মিষ্টান্ন ঘনীভূত চিনি বা হাই ফ্রুকটোজ সিরাপ ও সুক্রোজের তৈরি, ওগুলো আরও নেশা উদ্রেককারী। গবেষকেরা বলছেন চিনি আমাদের স্বাদগ্রন্থিকে পুরোপুরি তৃপ্ত হওয়ার সংকেত দিতে পারে না, যেমনটা পারে লবণ। যেমন লবণ বা নোনাজাতীয় খাবার একটু খাওয়া হয়ে গেলে আপনার স্বাদগ্রন্থি জানান দেবে যে যথেষ্ট হয়ে গেছে, আর খাওয়া যাবে না।

চিনিযুক্ত খাবারের বেলায় তা হয় না। ফলে আপনি একসঙ্গে অনেকগুলো চকলেটবার খেয়ে ফেলতে পারেন বা আস্ত এক প্যাকেট মিষ্টি কুকিজ খাওয়ার পরও আপনার আরও খেতে ইচ্ছে করতে পারে। আমেরিকান হার্ট ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন প্রক্রিয়াজাত (রিফাইন্ড) চিনি বা সাদা চিনি বারবার ওটা খাবার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে, আর না খেলে আবার উইথড্রয়াল (কোনো খাবারে আসক্ত হয়ে পড়লে তা ছেড়ে দেওয়ার পর শারীরিক প্রতিক্রিয়া) উপসর্গ হয়! এই দুটোই নেশাদ্রব্যের বিশেষত্ব।

চিনি প্রিয়রা চিনি ছেড়ে দিতে চেষ্টা করলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের (মস্তিষ্ক থেকে নিঃসরিত এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ) অভাব দেখা দেয়। ফলে তাঁরা বিষণ্ন, খিটখিটে, বদমেজাজি হয়ে পড়েন, ছোট শিশুরা কখনো অতিচঞ্চল হয়ে ওঠে। অবশ্য তাঁরা বলছেন চিনির প্রতি আসক্তি মানুষে মানুষে আলাদা, কারও একটু কম, কারও বেশি।

এখন কথা হলো, প্রক্রিয়াজাত (রিফাইন্ড) চিনি বা সাদা চিনি কি সত্যি খারাপ? তবে কেন আমরা বলি যে গ্লুকোজ বা চিনিই হলো শরীরের সব শক্তির উৎস বা চিনি খেলে বুদ্ধি বাড়ে? আসলে এখানে যে চিনির কথা বলা হচ্ছে তা সাদা চিনি নয়, এই চিনির অর্থ শর্করা। সুষম খাবারের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শর্করা হলেও আপত্তি নেই। কিন্তু সেই শর্করা জটিল শর্করা হতে হবে। আমরা যা সচরাচর রোজ খাই—ভাত, রুটি, শস্যজাতীয় খাবার, ফলমূল, নানা ধরনের সবজি—এগুলোতে লুকিয়ে আছে অনেক চিনি বা শর্করা। এই খাবারগুলো হজম হওয়ার পর ভাঙতে ভাঙতে গ্লুকোজে পরিণত হয়।

গ্লুকোজ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করি। প্রক্রিয়াজাত (রিফাইন্ড) চিনি বা সাদা চিনি কিন্তু তা নয়।এই চিনি হলো সুক্রোজ, যা ভাঙার প্রয়োজন হয় না, দ্রুত রক্তে মিশে যায় এবং রক্তে চিনির পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। আমাদের মেটাবলিক সিস্টেম এই চিনিকে সামলে উঠতে পারে না এ কারণে যে আদিকালে কোনো চিনি ছিল না, শর্করার উৎস ছিল শস্য বা ফলমূল আর এই জন্যে মেটাবলিক সিস্টেম সেভাবে গড়ে ওঠেনি আমাদের শরীরে। তো এই বাড়তি চিনি তখন একধরনের চর্বি (ট্রাইগ্লিসারাইড) হিসেবে শরীরে জমা হতে থাকে। তাই এই চিনি খেলে কেবল ওজন এবং শর্করা বাড়ে তা–ই নয়, চর্বিও বাড়ে। ফলে দেখা দেয় স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ফ্যাটি লিভারসহ অনেক কিছু। এর বাইরেও নানা খারাপ দিক আছে।

যেমন— প্রক্রিয়াজাত (রিফাইন্ড) চিনি বা সাদা চিনি খাবারে আসক্তি ও রুচি বাড়িয়ে দেয়, দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে, আর এতে ক্যালরি অনেক থাকলেও আঁশ, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি দরকারি উপাদান নেই। জটিল শর্করায় এগুলো বেশ ভালোমতোই আছে। তাই চিনি পেতে হলে যে চিনি খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই, আমাদের চারপাশের বেশির ভাগ খাবারেই আছে চিনি। সাদা চিনি সে জায়গায় একটা বাড়তি ক্ষতিকর উপাদান ছাড়া আর কিছু নয়।