১০০ বছর মেয়াদী সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ" ২৩ বছরে ৫ বার ভাঙ্গন

হাফিজুর রহমান সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
হাফিজুর রহমান সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : হাফিজুর রহমান সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ন, ০১ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ২:৩৭ অপরাহ্ন, ০১ জুলাই ২০২১

১৯৯৭ সালে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধটি ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যায়ে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হুন্দাই লিমিটেড একশ বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে বাঁধটি নির্মাণ করেন। অথচ ২৩ বছরের ব্যবধানে পঞ্চম বারের মতো ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হয়েছে এই বাঁধটিকে। 

মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ আর যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে হঠাৎ করেই সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর স্থায়ী শহররক্ষা বাঁধে ধস শুরু হয়েছে। ভাঙনের খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শহরবাসী। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ধস ঠেকাতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে। ১৯৯৭ সালে এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর পঞ্চম বারের মতো এই ধস নামলো।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে শহর রক্ষা বাঁধের পুরাতন জেলখানা ঘাট এলাকায় এ ধস শুরু হয়। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বাঁধের এই ধসের বিস্তৃতি ১৫০ মিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সাথে ফাটল দেখা দেয় আরো ৪০০ মিটার এলাকা জুড়ে। বর্তমানে এ বিস্তৃতি বাঁধের টি পয়েন্টের সংযোগ রক্ষাকারী পাকা সড়কে এসে ঠেকেছে।

সিরাজগঞ্জ শহরকে যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সালে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাধটি নির্মাণ করা হয়। ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হুন্দাই লিমিটেড এই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। নির্মাণকালে এই বাধটির স্থায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল একশ বছর। বাঁধটি নির্মাণের পর ১৯৯৭ সালে বাধের দায়িত্ব বুঝে নেয় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। একশ বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে নির্মিত এই বাঁধটির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হুন্দাই লিমিটেড পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা অজুহাতে এই বাধটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের ১২ বছর পর ২০০৯ সালের ১০ই জুলাই প্রথমবারের মতো এই বাঁধে ধস নামে। এরপর একই বছরের ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ধস নামে। ২০১০ সালের ১৬ই জুলাই তৃতীয় দফায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে ধস নামে। এরপর ২০১১ সালের ১৮ জুলাই চতুর্থবারের মতো এবং সব শেষ ২০২১ সালের ২৯ জুন পঞ্চম বারের মতো এই বাধটিতে ধস নামলো। 

এদিকে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে ধস নামায় শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের ধানবান্ধির বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ জানান, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১০০ বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে নির্মিত এই বাঁধটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে শহরবাসীর মধ্যে স্বস্তি নেমেছিল। শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের পর গত ২০ বছরে সিরাজগঞ্জ শহর জুড়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন। কিন্তু বার বার বাধে ধস নামায় শহরবাসী আর আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ইতিপূবে নদী বেশ কজন গবেষকরা এসে বলে গেছেন যমুনা নদীর তলাদেশে কারেন্ট রয়েছে। যে কোন সময় এই বাঁধ ধসে যাবে। তাই শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ মেরামত আর বর্ষার শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত তদারকি করলে ভাঙ্গনের সংখ্যা কম হবে। কিন্তু সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিক মতো তদারকি না করার কারণেই আজ এই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, শহর রক্ষা করার জন্য এই বাঁধটি শত বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে দিলেও পাঁচবার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তবে ভয়ের কিছু নেই, আমরা ভাঙ্গনের খবর পাওয়ার সাথে সাথে দলের নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। কোনভাবেই এই বাধকে ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণ ও নদীর পানির তীব্র স্রোতে ঘূর্ণাবতের সৃষ্টি হয়ে বাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে সিসি ব্লকগুলো দেবে গেছে। দুদিন আগেও আমরা এখানে ভালো অবস্থা দেখেছি। মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে এ ধস দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ধস ঠেকাতে বালিভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং শুরু করা হচ্ছে। তবে শহর বাসীর কোন ভয় নেই এই স্বল্প ভাঙ্গনে কিছুই হবে না।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বলেন, যেহেতু এটি শত বছরের স্থায়িত্ব নির্ধারণ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো তা হলে কেন বারবার ধসের মুখে পড়ছে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মন্ত্রণালয়ে কথা বলে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তবে এখন বেশি জরুরী আগে বাঁধটি রক্ষা করা। যে ভাবে কাজ চলছে তাতে আর ভাঙ্গন হবে না। তাই শহরবাসীকে বলি আপনারা আতঙ্কিত  হবেন না সবাই ঘরে থাকনে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবেন।