নানান সমস্যায় জর্জড়িত তারাগঞ্জের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা

দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি দিপক রায়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৫৫ অপরাহ্ন, ০৪ অগাস্ট ২০২১ | আপডেট: ১০:৫৫ অপরাহ্ন, ০৪ অগাস্ট ২০২১

মুই যদি প্রধানমন্ত্রীর দেখা পানুং হয়, হামার এই গুচ্ছগ্রামের মানুষগুলা যতগুলা সমস্যাত ভোগেছে সবগুলাই কনুং হয়। নিশ্চই প্রধানমন্ত্রী হামার সমস্যা গুলার কথা শুনলে সেগুলা সমাধানও করি দেইল হয়।

হামাক যখন থাকির আশ্রয় করি দেছে তখন হামার সমস্যাগুলাও সমাধান করি দেইল হয়। হামরাগুলা এটে যে কষ্ট করি আছি, এ্যানতোন করি  মানুষ বাস করে ? নাই লেট্রিন, নাই ঘর মজবুত, নাই কারেন। এমনকি এতোদিন থাকি এই গুচ্ছগ্রামোত হামরাগুলা আছি এপর্যন্ত কোনদিন কায়ও একনা কোন অনুদানও দিবার আসিল না। অথচ শুনিচি অন্য গুচ্ছগ্রামের মানুষ কত ত্রাণ পায়ছে কত অনুদান পায়ছে।

হামরা সয়ারের কিরণ চেয়ারম্যানের কাছোত হামার সমস্যার কথাগুলা কবার গেছি তা চেয়ারম্যান হামাক কয় যে থাকির ঘরটায় পাননা, ফির ত্রাণ নিবার আইছেন ? ঘর পাইছেন ঘরের মাটি কামড়ে খাও। কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের কামারপাড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রেহেনা।

তিনি জানান, সয়ার ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের গুচ্ছগ্রামে ৩০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথমের দিকে ৩০টি ঘর ৩০ পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৫-৬টি পরিবার ঘরগুলোতে বসবাস করলেও অন্যান্য পরিবারগুলো অন্যত্র বসবাস করায় গত ঈদের পর নতুন করে আশ্রয়হীনদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ঘরগুলো বসবাসের অনুপোযুক্ত থাকায় আশ্রয় পেয়েও সেখানে বসবাস করতে পারছে না সুবিধাভোগীরা। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিস সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জে গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পের জন্য ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১১২ মেট্রিক টন চাল মাটি ভরাট এর জন্য এবং ঘর নির্মানের জন্য প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয় দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়। শুরু থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবেদন একাধিক পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে মাটি ভরাট এর জন্য ১১২ মেট্রিক টন চাল যার তৎকালিন বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৪৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পে মাটি উত্তোলনের কথা থাকলেও সেখানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাশর্^বর্তী চিকলী নদী থেকে বালু উত্তোলন করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছে সংস্লিষ্ট প্রকল্প চেয়ারম্যান।  

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এবছর কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টিপাতেই উক্ত প্রকল্পে ভরাটকৃত বালু বৃষ্টির পানির ¯্রােতে ধুয়ে যাওয়ায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে উক্ত গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে। ভেঙ্গে পড়েছে দুইটি টয়লেট ও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে কয়েকটি ঘর। কিছুদিন আগের ঝড়ে উড়ে গেছে একটি টয়লেটের টিনের চালা। তৈরিকৃত ঘরগুলোর বেড়ার নিচ দিয়ে হাটু সমান ফাকা থাকায় সন্ধ্যা হলেই উপদ্রব দেখা দেয় কুকুর-শেয়ালের। ফলে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছে সুবিধাভোগীরা।

বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নানান বিড়ম্বনায় পড়ছেন উক্ত গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। নেশাখোর ও জুয়ারীদের অত্যাচারে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না বলে জানান সেখানে বসবাসরত কয়েকজন। এরমধ্যেই সেখান থেকে চুরি হয়ে গেছে একটি টিউবওয়েল। ফলে নানান বিড়ম্বনায় বসবাস করছে কামারপাড়া গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত বাসিন্দারা। সেখানে বসবাসরত রেহেনা বেগম, রুবিনা বেগম, সাবিনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘হামরা আগোত যেটে আছিনো মানুষের জমিত বাড়ি করি থাকলেও ভালোই আছিনো।

এটেকোনা হামরা আসিবারে চাই নাই। চেয়ারম্যান হামাক অনুদান, ত্রাণ আরো মেলা (অনেক) সুযোগ সুবিধা দিবার চাইছে। সেইজৈন্যেই হামরা এটে আসছি। কিন্তু এ্যালা এটে আসি কিছুই নাই। আগোত যেটে আছিনো সেটে কারেনও (বিদ্যুৎ) আছিলো, এটেতো কারেনো নাই। কি যে আজাবত পচ্ছি এটে আসি, সেটা হামরা বুঝুছি।,

এবিষয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যান ও সয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ বক্তব্য দিতে রাজী না হলেও এক পর্যায়ের সাংবাদিকদের জেরার মুখে পড়ে বলেন, সামান্য ভেঙ্গেছে। দুই একদিনের মধ্যেই ভাঙ্গা অংশ ভরাট করে দেওয়া হবে।

উক্ত গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে বছর যেতে না যেতেই ভাঙ্গনের বিষয়ে কথা বলতে গেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজী নন বলে তিনি অফিস ত্যাগ করে গাড়িতে করে অন্যত্র চলে যান। তাই তার বক্তব্য নেওয়া হয়নি।