ছিন্নমূলদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন রেজিষ্ট্রেশন করাচ্ছে চলো স্বপ্ন ছুঁই

একরামুল ইসলাম, পীরগাছা, (রংপুর) প্রতিনিধি
একরামুল ইসলাম, পীরগাছা, (রংপুর) প্রতিনিধি একরামুল ইসলাম, পীরগাছা, (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ন, ১৭ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ৪:৪৮ অপরাহ্ন, ০৪ মে ২০২৪

গতবছরের ৮ই মার্চ দেশে প্রথমবারের মত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনকে সনাক্ত করে রোগতত্ত্ব,রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। এরপর স্বাস্থ্যবিধি ও বিধিনিষেধে শেষ হয় পুরো বছর।

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ওই দিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়ে দেশে ভ্যাক্সিন প্রয়োগের কর্মসূচি শুরু হয়। এবং শুরুরদিনে ২৬ জনকে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশে ভ্যাক্সিন কর্মসূচি শুরু হলেও টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে অনীহার কথা প্রকাশ পেয়েছে। এরপর নানা আশঙ্কা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে ভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহ দেখায়নি মানুষ। কিন্ত সব শঙ্কা কাটিয়ে সম্প্রতি ভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহ বাড়ছে উত্তরের জেলা রংপুরের মানুষের।

এরই মধ্যে রংপুরে এসে পৌঁছেছে মডার্ণার ভ্যাক্সিন। সমাজের অসহায় দিনমজুর মানুষের মাঝে ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চলো স্বপ্ন ছুঁই। করোনার শুরু থেকে সম্মুখসরে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটির সদস্যরা। আজ চতুর্থ দিনের মতো দিনমজুর এসব মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন রেজিষ্ট্রেশন করেছে চলো স্বপ্ন ছুঁই।

সমাজের যেসব মানুষের কাছে ভ্যাক্সিন রেজিষ্ট্রেশন ঝামেলা মনে হয়, তাদের ভ্যাক্সিনেশন নিশ্চিত করতে এবার চলো স্বপ্ন ছুঁই উদ্যোগ নিয়েছে এসব দিনমজুর মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন রেজিষ্ট্রেশন করে দেয়ার। সেই সাথে তারা এসব মানুষের ভ্যাক্সিন নিতে উৎসাহিত করছেন, এবং ভ্যাক্সিন গ্রহণ কার্ড প্রিন্ট করে তাদের সব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৫০০ এর অধিক দিনমজুর মানুষের বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন রেজিষ্ট্রেশন করেছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোঃ মুহতাসিম আবশাদ জিসান বলেন, "বিভিন্ন ধরনের ভয় থাকলেও আগের চেয়ে মানুষের ভ্যাক্সিন নেয়ার আগ্রহ বেড়েছে। বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষদের গণটিকাদানের আওতায় আনতে নগরীতে চলো স্বপ্ন ছুঁই এর ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। আমাদের লক্ষ দেশটাকে সুস্থ রাখা, দেশের মানুষকে সুস্থ রাখা, অসহায় দিনমজুর এসব মানুষের ভ্যাক্সিনেশনকে সহজ করে তুলার জন্য আমাদের এরকম উদ্যোগ। দু’দিনের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে এবং রংপুরের অন্যান্য জেলায় আমাদের এই কর্মসূচি শুরু হবে।

আসুন সবাই ভ্যাক্সিন নেই, সুস্থ থাকি। চলো স্বপ্ন ছুঁই এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ তানজিম আলম তাসিন বলেন, "করোনা ভাইরাস শুধু মরনঘাতী নয় এটি ব্যয়বহুল রোগ। সম্প্রতি আমার এক বন্ধু করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তার চিকিৎসাতে মাত্র চার দিনে তিন লক্ষ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। যা নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের কাছে কল্পনা মাত্র। আর আমি মনে করি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই আমরা দিনমজুর পরিবারের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা রেজিষ্ট্রেশন করে দিচ্ছি এবং নিজেদের অর্থায়নে টিকার কার্ড প্রিন্ট করে দিচ্ছি।

আমরা চাই করোনা মুক্ত সোনার বাংলা"। তাদের এই কার্যক্রমে ইতিমধ্যে অনেক সাড়া পড়েছে, মানুষের মাঝে বেড়েছে ভ্যাক্সিন গ্রহণের হার। সচেতন নাগরিকরা বলছেন দেশের এরকম পরিস্থিতিতে চলো স্বপ্ন ছুঁই এর এরকম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাদের প্রশংসনীয় এই কার্যক্রমে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসছে দেশের আরো অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।